এক রাতেই রাজধানীর সড়কে গেলো চার প্রাণ
রাজধানীতে এক রাতেই পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দুইজন। নিহতদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বুধবার (২৬ মে) রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। চারটি মৃতদেহই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত কলেজ ছাত্র টিপু সুলতান রনি (২১), শনিরআখরায় দনিয়া কলেজের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত রেকার চালক মাসুদ (২৫), কামরাঙ্গীরচরে নোয়া গাড়ির ধাক্কায় নিহত শিশু রাহিম (১০) ও খিলক্ষেতে নিহত শরিফা বেগম (৩৫)।
নিহত টিপুর মোটারসাইকেলে থাকা আরোহী মো. শাহিন জানায়, ফজরের আযানের পর টিপু তার মোটরসাইকেলে তাকে (শাহিন) ও নাঈমকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে বাসায় ফেরার সময় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে। পরে রাস্তায় ছিটকে পড়লে পাশের আইল্যান্ডের সাথে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয় টিপু। এছাড়া তিনি ও নাঈম সামান্য আহত হয়। পরে টিপুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল ছয়টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাহিন আরও জানায়, টিপু ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তাদের বাড়ি নরসিংদী জেলার। পরিবারের সাথে এলিফ্যান্ট রোড মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারে থাকত। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট ছিল সে।
এদিকে, শনিরআখরা দনিয়া কলেজের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয় মাসুদ (২৫)। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদশর্ক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মাসুদ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের রেকার গাড়ির চালক ছিল। রাত ১১টায় শনিরআখরা ফ্লাইওভারের ঢালে একটি বিকল হয়ে পড়া কাভার্ডভ্যানে রেকার লাগানোর সময় একটি ট্রাক মাসুদকে ধাক্কা দেয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রাত ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মাসুদের বাড়ি বরিশাল হিজলা উপজেলায়। বাবার নাম মোতালেব বয়াতি। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে যাত্রাবাড়ি কাজলায় বসবাস করছিলেন।
কামরাঙ্গীরচর খালপাড়ে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত রাহিম মিয়া স্থানীয় ফাতেমা আইডিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। নিহত রাহিমের বাবা মো. মোহন চান জানান, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে খেলতে যায় রাহিম। এর কিছুক্ষণ পরেই তার দুর্ঘটনার খবর শুনতে পান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী কামরাঙ্গীরচর নৌপুলিশ ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, সকাল পৌনে সাতটার দিকে খালপাড় কবুতর হাট এর সামনের রাস্তায় একটি নোয়া গাড়ি শিশুটিকে ধাক্কা দেয়। পরে ওই নোয়া গাড়ির চালকই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশ গাড়ি চালক মো. বাবুল ও গাড়ির এক আরোহীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
অপর দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সড়কে অজ্ঞাত যানবাহনের ধাক্কায় নিহত হয় শরিফা বেগম। খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামসুল হক সরকার জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী পরিচ্ছন্নকর্মী শরিফা। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের লোটাস কামাল ভবনের বিপরীত পাশের রাস্তায় তারা ছয়জন মিলে ঝাড়ু দিচ্ছিলো। তখন কোন একটি যান শরিফাকে ধাক্কা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর সহকর্মীরা রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থা তাকে পড়ে থাকতে দেখে। তবে তারা যানটি দেখতে পাননি। পরে খবর পেয়ে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের চাচা মো. আব্দুস সালাম জানান, নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলার আলিপুর গ্রামের মতি মিয়ার মেয়ে শরিফা। স্বামী মো. রাসেল ও দুই সন্তান নিয়ে খিলক্ষেত বনরুপা এলাকায় হুমায়ুনের বাড়িতে থাকতো সে। গত এক বছর ধরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারের মাধ্যমে অস্থায়ী পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করছিল সে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন