ঐতিহ্যের দৃষ্টিনন্দন সাক্ষী ভোলার আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি
পুরানো ইতিহাস মানেই নতুন প্রজন্মের শেকড়ের সন্ধান। যেখানে থাকে ঐতিহ্যের লালন, নিখাঁদ ভালোবাসার স্পর্শ। থাকে গৌরবগাঁথা মানুষের প্রেরণার গল্প। ইতিহাস ঐতিহ্যের তেমনি এক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ভোলার ‘আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি’ (জব্বার আলয়)।
ভোলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বোরহানউদ্দিন উপজেলা, যা এক সময় কালীগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। এ জমিদার বাড়িটির দালান কোঠার দিকে তাকালে মনে হবে একেকটি শহর। বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল জব্বার চৌধুরীর নাম ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র জেলাজুড়ে।
জেলার বিশিষ্ট পরিবারগুলোর মধ্যে এ পরিবারটি অন্যতম। প্রায় চার হাজার একর সম্পত্তির মালিক ছিলেন জমিদার আব্দুল জব্বার মিয়া।
১২৫৫ সালে জম্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো এলাকায় সমাজ সেবক ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আব্দুল জব্বার মিয়া মৃত্যুবরণ করেন ৯৬ বছর বয়সে ১৩৪১ সালে।
দীর্ঘ বছর জমিদারি করে গেছেন তিনি। ১৩৩৭ সালের দিকে তিনি তার জমিদারির সব সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন।
তাঁর চার ছেলের মধ্যে মজিবুল হক চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সাবেক সংসদ সদস্য কৃষক প্রজা পার্টির ভোলা মহকুমার প্রধান নেতা ও বরিশাল জেলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। মজিবুল হকের ছেলে রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া) ছিলেন ভাষা সৈনিক ও এমএলএ। এ বাড়িতে এখন তাদের পরবর্তী বংশধররা বসবাস করে আসছেন।যাঁদের অনেকেই দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। অতিথেয়তা এ পরিবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়িটি বোরহানউদ্দিন তথা পুরো দ্বীপ জেলার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। বাড়িতে দুই/তিনতলা দৃষ্টিনন্দন ১২টি ঘর রয়েছে। যা ইট, সুরকি, লোহা ও কাঠ দিয়ে তৈরি। প্রতিটি ঘরই দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত। বাংলা ১৩১৯ সাল থেকে ১৩৫১ সালের বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ করা হয় ঘরগুলো। বাড়ির সামনেই রয়েছে বৈঠকখানা। সেখানে এখনো ‘টানা পাখা’ জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য বহন করছে।এ পাখাটি একসময় পরিচালনা করতেন জনৈক বোবা পাখালি।রয়েছে সুদৃশ্য পালকি। বাড়ির পেছনেই রয়েছে বিশাল দীঘি ও বাঁধানো ঘাট।অনেকেই মনেকরছেন, দীঘির চারপাশ আধুনিকায়ণ করা হলে সব বয়সী দর্শনার্থীদের জন্য অবসর কাটানোর উত্তম জায়গা হবে এ স্থানটি।
বর্তমানে আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি বা কুতবা মিয়া বাড়ি নামে পরিচিত, এ জমিদার বাড়িতে তাঁদের বংশধররাই বসবাস করে আসছেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও পুরো বাড়িটি এখনো সেই জমিদারির গৌরব বহন করে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাচীনতম এ জমিদার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন বাড়িটি দেখতে। জমিদার আব্দুল জব্বার মিয়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জমিদারি করেছেন।সবচে’ বেশি আকর্ষণ করে নতুন প্রজন্মকে।
এ বাড়ির উত্তরাধিকার মরহুম ফখরুল আলম চৌধুরীর সন্তান সাংবাদিক ও লেখক শিমুল চৌধুরী জানান, বাড়িটির সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতে ইতোমধ্যে পুরো বাড়ি রংকরণ করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ির গৌরবগাঁথা স্মরণীয় করে রাখতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে।
যেভাবে আসবেন:
আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি বাড়িটি দেখতে হলে যেতে হবে ভোলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। সরাসরি বাসে বোরহানউদ্দিন যেতে হবে। এরপর রিকশা বা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে জমিদার বাড়িতে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কেউ আসতে চাইলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠে সরাসরি বোরহানউদ্দিন শহরে নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে টেম্পো, অটোরিকশার বা রিকশায় জমিদার বাড়িতে যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি ভোলা শহরের লঞ্চঘাটে নেমে যাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে টেম্পো বা অটোরিকশায় করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালে নামতে হবে। তারপর বাসে বোরহানউদ্দিন গিয়ে তিন চাকার কোনো গাড়িতে যাওয়া যাবে জমিদার বাড়িতে।
ভোলার দর্শণীয় স্থানগুলোর মধ্যে আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে একটি পুস্তিকা প্রণীত হলে দর্শণার্থীরা আরো সহজে বাড়িটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন