কারলাইলের প্রস্তাবিত ভারত সফর হচ্ছে কি?
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘ব্যাখ্যা’ করতে ব্রিটিশ সাংসদ আলেক্স কারলাইলের প্রস্তাবিত ভারত সফর হচ্ছে কি? প্রশ্নটা ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে। কারণ, দিল্লির ‘ফরেন করেসপন্ডেটস ক্লাব’ (এফসিসি) ১৩ জুলাই কারলাইলের প্রস্তাবিত সংবাদ সম্মেলনটি বাতিল করে দিয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর পক্ষে দিন বদল করা সম্ভব হলে অন্য কোনো দিন সংবাদ সম্মেলনের জন্য আয়োজন করা যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে দুটি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। প্রথমত, কারলাইল তাঁর প্রস্তাবিত দিল্লি সফর জারি রাখছেন কি না। সফর জারি থাকলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন কি না। করলে কোথায়? দ্বিতীয় প্রশ্ন, ভারতের পক্ষে অন্য দেশের কোনো সাংসদকে এই কারণে সফরে না আসার কথা বলা সম্ভব কি না।
ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের সদস্য আলেক্স কারলাইল বিশিষ্ট আইনজীবী। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হয়ে মামলা লড়ার জন্য বিএনপি তাঁকে নিয়োগ করেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর জেল হয়েছে। তাঁর জামিনের আবেদনও অগ্রাহ্য হয়েছে। এই বিচার নিয়ে কারলাইল ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশে যাওয়ার অনুমতি তাঁর নেই। ভারতে এসে তাই তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থার ‘ব্যাখ্যা’ দিতে আগ্রহী। সে সময় বাংলাদেশ থেকে বিএনপির কয়েকজন আইনজীবী নেতারও দিল্লি আসার কথা।
স্পষ্টতই ভোটের আগে খালেদা জিয়ার বিচার ও তাঁর জামিন না পাওয়াকে বিএনপি ইস্যু করতে চাইছে। সে জন্য ভারতের মাটিকে তারা ব্যবহার করতে উদ্যোগী। বাংলাদেশের আপত্তিও এখানেই। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বাংলাদেশ এই নিয়ে ভারতের কাছে তার আপত্তির কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশের বক্তব্য, ভারত–বিরোধিতার জন্য বাংলাদেশ তার জমিকে ব্যবহার হতে দেয় না। তা হলে বাংলাদেশ সরকারের বিরোধিতা করার সুযোগ ভারত কেন তৃতীয় কোনো দেশের কাউকে দেবে? বাংলাদেশের আরও যুক্তি, সার্কের সনদেও বিষয়টি স্পষ্ট। তাতে বলা হয়েছে, সার্কের কোনো দেশই অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সেই দেশকে ব্যবহৃত হতে দেবে না। সেই কারণে কারলাইলের সফরের ওপরও ভারতের লাগাম টানা উচিত।
বাংলাদেশের যুক্তি ভারত অগ্রাহ্য করতে পারেনি। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, কারলাইল ইতিমধ্যেই ভারতে আসার ই-ভিসা নিয়ে ফেলেছেন। ফলে সাংসদ কারলাইলের ভারত সফর আটকানো নাকি সম্ভব নয়। তবে তিনি যাতে এফসিসিতে সংবাদ সম্মেলন করতে না পারেন, সে জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ‘চাপ’ দেওয়া হয়। ক্লাবের সভাপতি এস ভেঙ্কট নারায়ণ ‘চাপ সৃষ্টির’ কথা অস্বীকার করে রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লর্ড কারলাইলকে ১৩ তারিখ বেলা একটায় প্রাথমিকভাবে সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন ভারত সফরে এসেছেন। এই সফর নিয়ে কথা বলতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত শিন বোঙ্গকিল এফসিসিতে আসতে চান। ক্লাব সদস্যরাও তাঁকে পেতে আগ্রহী। মুন জায়ে-ইনের সফরের গুরুত্ব অনুধাবন করে এফসিসি তাই ১৩ তারিখ বেলা একটায় শিন বোঙ্গকিলকে সময় দিয়েছে।’ ভেঙ্কট নারায়ণ বলেন, ‘১২ তারিখে ভারতের পর্যটনমন্ত্রী আলফোনস কান্নানথানম এফসিসিতে সংবাদ সম্মেলন করবেন। কারলাইলকে তাই বলা হয়েছে, তিনি আগ্রহী থাকলে ১৩ তারিখের পর অন্য কোনো দিন এফসিসি তাঁর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে পারে।’
কিন্তু কারলাইল ১৩ তারিখেই দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে অনড়। এফসিসি না হলে অন্য কোথাও যাতে তা করা যায়, তার দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন জনৈক লুবনা আসিফকে। সোমবার লুবনা আসিফ সেই দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এক মাস আগে লর্ড কারলাইল আমাকে তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা নিযুক্ত করেছেন। উনি ১৩ তারিখেই দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করবেন। কোথায়, কখন, তা মিডিয়াকে ঠিক সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
আপাতত দেখার বিষয় হলো, কারলাইল ভারত সফরে আদৌ আসেন, নাকি ভারতীয় অসহযোগিতায় কোনোভাবে সেই সফর বাতিল হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন