‘কেউ খোঁজ রাখেন না’ ২১ আগস্টে আহত শেখ হাসিনার দেহরক্ষী যশোরের টুকু’র
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2021/08/Keshobpur-Tuku2.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হন সফিকুল ইসলাম টুকু। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলার বর্তমান বাসিন্দা।
দীর্ঘ ১৭ বছর দুঃসহ শারীরিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি মনে উঠলে বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি।
সফিকুল ইসলাম টুকু (৫৭) সেসময় ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী।
তিনি বর্তমানে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে বসবাস করছেন নিজ বাড়িতে নিজের জীবন বাজি রেখে সেদিন তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই নিষ্ঠাবান মানুষটির এখন খোঁজ রাখেন না কেউ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিনে সফিকুল ইসলাম টুকু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দলের (পিএসএফ) ১৮ সদস্যের একজন হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ওই দিন ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী ও শোক দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনার জনসভায় ট্রাকের উপরে সভামঞ্চের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সভা শুরু হয়। নেত্রী (শেখ হাসিনা) বিকেল ৫টায় সভাস্থলে পৌঁছে ট্রাকে উঠে দীর্ঘ ২০ মিনিট বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শেষ করে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে মাইক থেকে সরে যাওয়ার সময় একটি গ্রেনেড দক্ষিণ দিক থেকে ট্রাকের বাম পাশের ডালার উপরে পড়ে। এ সময় সামনে থাকা জনতার ভেতর গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়। তখনই আমিসহ নেতাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে নেত্রীকে ট্রাক থেকে দ্রুত নিচে নামিয়ে মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ব পরিকল্পিত ওই হামলায় নেত্রী শেখ হাসিনা যখন ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিলেন তখন তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটের ব্যবধানে ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সেসময় আমিও স্প্লিন্টারবিদ্ধ হই। চারিদিক থেকে মানুষের আর্তনাদ শোনা যায়। কাছ থেকে দেখেছি কারও হাত নেই, কারও পা নেই। আবার কারও নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে। আমাদের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার নেত্রকোনার নিহারঞ্জন ধর গ্রেনেডের আঘাতে এক পায়ের হাটুর নিচে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হাসপাতালে নিয়ে আমি অসুস্থ অবস্থায় তাকে রক্তদান করি। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াল স্মৃতি মনে করলে আজও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি।’
কে এম সফিকুল ইসলাম টুকু এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্প্লিন্টারবিদ্ধ হওয়ার পরে শরীরে অস্ত্রোপচার করি। আজও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্লিন্টারের ক্ষতস্থানে যন্ত্রণায় কাতর হতে হয়। ২০১০ সালে আমি অসুস্থতার কারণে গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গৌরিপুরে ফিরে আসি। পরে কেশবপুর শহরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকি। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও যশোর থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এখনও আমাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হয়। বর্তমানে আমার হার্টের সমস্যাও ধরা পড়েছে। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে সেলিমুল হাসনাঈন খান রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সন্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও মেয়ে সারারা ইসলাম কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বর্তমানে স্ত্রীও অসুস্থ। আমি ও আমার স্ত্রীর চিকিৎসাসহ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ভার বহন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একপ্রকার মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এই অবস্থার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সুসংগঠিত করে দলের সকল কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছি।’
দলের কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘একদিন যারা আমার সহযোগীতা নিয়ে নেত্রীর সাথে দেখা করতে যেতেন আজ তাঁরা এমপি-মন্ত্রী হয়ে আমাকে চেনেন না। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের কোন নেতাও আমার খোঁজ করেন না।’
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন