খাগড়াছড়িতে পানিবন্দি, ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে বহু মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদস্যরা। জেলাতে টানা বর্ষণে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে বহু মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গলবার মাইনী নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। বন্ধ রয়েছে রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ।
জেলা সদরের চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে নিম্না লের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার মুসলিমপাড়া, মেহেদীবাগ, রাজ্যমনি পাড়া, খবংপুড়িয়া, বটতলীসহ কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় নদীর পানি বেড়ে নিম্না ল প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় ১শ’ ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অনেক মানুষ এসেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুরী খাবারসহ সব ধরনের সহায়তা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো: শাহ আলম জানান, রান্না করা ও শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্ধারকর্মীরা প্রস্তুুত রাখা হয়েছে।
এদিকে বর্তমানে সারাদেশে ভারী বর্ষণের কারণে ও জলাবদ্ধতা, ভূমিধস এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিযেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পার্বত্য খাগড়াছড়ির কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে এবং সাধারণ জনগনের জীবন যাপন কষ্ট হযে পড়ছে।
দুর্যোগ মোকাবেলায খাগড়াছড়ি জোন কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ অসহায ব্যক্তিবর্গের ত্রাণ বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হযেছে।
বুধবার(৯ই আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় জেলা শহরের দক্ষিণ মেহেদীবাগ এলাকায় একশ জন ক্ষতিগ্রস্থ অসহায পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি সদর জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুল হাসনাত জুয়েল।
এসময় জোন অধিনায়ক জানান, গত কয়েকদিন যাবত ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা ও ভূমি ধসের কারণে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হযে পড়ে। এসব প্লাবিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায পরিবারদের মাঝে খাগড়াছড়ি জোন ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ করে। এই ত্রাণ খাগড়াছড়ি জোনে কর্মরত সেনাসদস্যদের রেশনের কিছু অংশ নিযে তৈরী করা হয়। ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। খাগড়াছড়িতে আমরা এক সাথে থাকবো ও একে অপরকে সহায়তা করবো।
এ সময় খাগড়াছড়ি সদর জোনের উপ-অধিনাযক মেজর তালুদার রাব্বী, জোন অ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন শিহাবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ত্রাণ পেযে উপকারভোগীরা খাগড়াছড়ি সদর জোনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অপরদিকে টানা বর্ষণের কারণে খাগড়াছড়ির নদ-নদীতেগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার চেঙ্গী ও মাইনি নদীর তীরবর্তী নিন্মা ল প্লাবিত হয়েছে।
বিশেষ করে জেলা শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, খবংপুড়িয়া, বাঙ্গালকাটি, রাজ্যমনি পাড়া, বটতলী, কালাডেবা প্রভৃতি এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার পানিতে আটকা পড়েছেন।
ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির মুসলিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ২০টির মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া দীঘিনালার ৫টি কেন্দ্রে ১০০পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহ আলম জানান, পানি বাড়তে থাকায় আরো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও উপকরণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে দীঘিনালায় তীব্র পানির স্রোতে জামতলি ব্রিজের একাংশ ভেঙ্গে গেছে। ফলে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দীঘিনালা উপজেলার জামতলি বেইলি ব্রিজের ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বপাড়ের অংশ মেরামত করার চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী ও ঠিকাদারের লোকজন।
এব্যাপারে স্থানীয় আক্তার হোসেন জানান, ভোরে প্রবল বর্ষণ এবং ছড়ার তীব্র স্রোতে ব্রিজের পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কে ভেঙ্গে নিয়ে যায়। ফলে দীঘিনালা-খাগড়াছাড় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মেরামতের পর এখন থ্রি হুইলার এবং মোটরসাইকেল এবং লোকজন পায়ে হেটে চলাচল করতে পারছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ঘনশ্যাম ত্রিপুরা মানিক বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে প্রবল স্রোতে জামতলী বেইলি সেতুর একপাশের ভরাট কৃত মাটি সরে গিয়ে সেতুটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীদের সহযোগিতায় যানচলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন