খাগড়াছড়ির টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক কতৃক শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রাকিব শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগীরা। হুমকি দাতা হলেন, জেলা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি শিক্ষক(ইলেক্ট্রনিক বিভাগ) মো: রাকিব।

খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে গতকাল(১৪ই জুন) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঙালি শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের দ্বারা পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের ইলেক্ট্রনিক বিভাগের সহকারি শিক্ষক মো: রাকিব বাঙালি শিক্ষার্থীদের উস্কানি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকালের উক্ত ঘটনার পর শিক্ষক রাকিব পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

তাছাড়া তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকড হয়েছে দাবি করে ওই ফেসবুক আইডি থেকে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন মেসেজ পাঠিয়ে ও পোস্টে কমেন্ট করে নানা হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলেও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। শিক্ষক রাকিবের ফেসবুক আইডির নাম “ঔঁংঃরপব জধশরন”।

এদিকে, বৃহস্পতিবার(১৫ই জুন) খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে শুরু নারাঙহিয়া, উপালি পাড়া, স্বর্নিভর, হবংপুজ্জে এলাকায় সেনা-পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার ছিল বলে দেখা গেছে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, বুধবার(১৪ই জুন ২০২৩) সকাল ১১টার দিকে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে এক পাহাড়ি ছাত্র ও এক বাঙালি ছাত্রের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় অপর এক পাহাড়ি ছাত্র ঘটনাটি জানতে সেখানে গেলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষক(ইলেকট্রনিক বিভাগ) রাকিব ওই ছাত্রকে বিনা কারণে বেত্রাঘাত করে। এরপর বেত্রাঘাতের শিকার হওয়া ওই ছাত্র অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের কাছে গিয়ে অভিযোগ দেয় এবং অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিবকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দেয়।

কিন্তু সমাধান হলেও অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দেয়ার কারণে ওই ছাত্রের প্রতি ক্ষুব্ধ হন উস্কানিদাতা শিক্ষক রাকিব(সহকারি শিক্ষক, ইলেক্ট্রনিক বিভাগ)। তিনি উশৃংখল সেটলার ছাত্রদের উস্কানি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার উস্কানিতে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র মাসুমের নেতৃত্বে এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র মো: ইয়াছিন, মো: রহমান, মো: সোহেল রানা, পারভেজ, সানজিদুল ইসলাম, আরিফ, বাহারসহ আরো কিছু বহিরাগত বাঙালি যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে বিনা উস্কানিতে পাহাড়ি ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আঘাত প্রাপ্ত হয়।

পরে এই ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে পাহাড়ি ছাত্ররাও সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

এর পরবর্তী আবারো বাঙালি ছাত্র ও বহিরাগত সেটলার যুবকরা খাগড়াছড়ি সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় অহেতুক ৫জন পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর করে বলে জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের উস্কানিতে এমন হামলার ঘটনায় পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার উস্কানিদাতা শিক্ষক রাকিবের বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর উস্কানিদাতা শিক্ষক রাকিব(সহকারি শিক্ষক, ইলেক্ট্রনিক বিভাগ)। খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রাকিবের উস্কানিতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর সা¤প্রদায়িক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

গতকাল বুধবার (১৪ই জুন ২০২৩) পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি শান্ত চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রুপান্ত চাকমার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অবিলম্বে সা¤প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামীর শিক্ষক রাকিবকে প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, গতকাল সকাল ১১টার দিকে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে এক পাহাড়ি ছাত্র ও এক বাঙালি ছাত্রের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় অপর এক পাহাড়ি ছাত্র ঘটনাটি জানতে সেখানে গেলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষক(ইলেকট্রনিক বিভাগ) রাকিব ওই ছাত্রকে বিনা কারণে বেত্রাঘাত করে। এরপর বেত্রাঘাতের শিকার হওয়া ওই ছাত্র অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের কাছে গিয়ে অভিযোগ দেয় এবং অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিবকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দেয়ার কারণে ওই ছাত্রের প্রতি শিক্ষক রাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে বাঙালি ছাত্রদের উস্কানি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার উস্কানিতে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র মাসুমের নেতৃত্বে এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র মো: ইয়াছিন, মো: রহমান, মো: সোহেল রানা, পারভেজ, সানজিদুল ইসলাম, আরিফ, বাহারসহ আরো কিছু বহিরাগত বাঙালি যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে বিনা উস্কানিতে অন্যান্য পাহাড়ি ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন পাহাড়ি ছাত্র গুরুতর ভাবে আহত হয়।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, প্রত্যক্ষেদর্শী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত ছিল। কিন্তু তারা হামলাকারী বহিরাগত সেটলার বাঙালি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং ঘটনাটি পাহাড়ি ও বাঙালি সা¤প্রদায়িক সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।
নেতৃদ্বয় বলেন, যে কোন শিক্ষার্থী শিক্ষা অর্জনের জন্য সে তার প্রতিষ্ঠানে যায়। প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সে যদি তাঁর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের দ্বারা আক্রান্ত হয়, বেত্রাঘাতের শিকার হতে হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থান কোথায়? সরকার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেত্রাঘাত নিষেধ করেছিল, কিন্তু শিক্ষক রাকিব কোন আইনে ও নিয়মে শিক্ষার্থীর উপর বেত্রাঘাত করল। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ঘটনার সমাধান দেওয়ার পরও শিক্ষক রাকিব বাঙালি শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে কিভাবে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার সাহস পাই? আমরা খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রাকিবের উস্কানিতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অবিলম্বে সা¤প্রদায়িক উস্কানিদাতা শিক্ষক রাকিবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।

খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো: হাবিবুর রহমান ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ছাত্র উপর শিক্ষক বেত্রাঘাত বিষয়টি তাৎক্ষনিক সমাধান করা হয়েছে। অভ্যন্তরীন তদন্ত সাপেক্ষে ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের যে কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক নীতিগত ভাবে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য. তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষকের উস্কানিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার(১৪ই জুন ২০২৩) সকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার সময় পাহাড়ি ও বাঙালি দুই ছাত্রের মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক রাকিবের হাতে বেত্রাঘাতের শিকার হন অপর এক পাহাড়ি শিক্ষার্থী। পরে এ ঘটনাটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের মাধ্যমে মীমাংসা হলেও রাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে বাঙালি শিক্ষার্থীদের সা¤প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।