খাগড়াছড়িতে জেলা পরিষদের এনেক্স ভবনের নির্মাণাধীন পার্কিংশেড ধসে ২ শ্রমিকের মৃত্যু
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের এনেক্স ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের সময় সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণাধীন ছাদ ধসে ২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
এতে ৯জন শ্রমিক আহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো কয়েকজন। এ ঘটনায় ছাদের নিচে আটকা পড়েছে আরো কয়েকজন। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী,পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নিহতের এক জনের নাম সাজ্জাদ হোসেন বলে জানা গেছে। অপর জনের নাম জানা যায়নি। এদিকে উদ্ধার তৎপর অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার(৮ই অক্টোবর) বিকাল ৪টায় পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন ভবনের সম্মুখভাগে ছাদ ভেঙ্গে পড়ে দুইজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নির্মানধীন চলমান অবস্থায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ চত্বরে সম্প্রসারিত ছাদের ধালাই চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সেখানে কলেজ গেইট এলাকার একজনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম সাজ্জাদ(২২)। তিনি ছাত্র ও শ্রমিক হিসেবে থাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে’র এইচএসসি (একাদশ) ভোকেশনাল জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ২য় বর্ষে ছাত্র।
অহতরা হলেন, শালবাগানের মুসলিম উদ্দিনের ছেলে মো: সোহেল(২৩), আবুল সামাদ ছেলে মো: রোকন(২৪), আব্দুল ছালামের ছেলে মো: হানিফÑ১(২৫), মাইসছড়ির লালূচাদ ছেলে মো: হাসান(২৪), মাটরাংগা’র আব্দুল খালেকের ছেলে মো: হানিফÑ২(২৭)।
পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের সময় ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভবনে আরো কয়েকজন নির্মান শ্রমিক আটকা আছে। পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্মানাধীন ভবন ধসের পর চলছে উদ্ধার অভিযান।
এ ঘটনায় আরো তিনজনসহ অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো পাঁচ জন। এছাড়াও ভবন ধসে আটকা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত আছে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
জানা যায়, বিকাল ৪টায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্প্রসারিত ভবনের সামনের অংশের ছাদ ধালাইয়ে ১৬জন শ্রমিক কাজ করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নতুন ভবনের গ্রিল শেড নির্মাণের ধালাইয়ের কাজ চলাকালে হঠাৎ করে ছাদের উপরের অংশ ধসে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ৬জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হঠাৎ ধসে পড়ে ছাদ। আটকা পড়ে শ্রমিকরা। তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৯ শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক শ্রমিক মারা যায়।
নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে নির্মাণাধীন ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ধসে পড়া ভবনের নিচে শ্রমিকরা আটকা পড়েন। এসময় উদ্ধার করা ছয় শ্রমিককে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও পাঁচ শ্রমিক। ওই ভবনের নিচে আরও দুই শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন, এমন শঙ্কা থেকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও খাগড়াছড়ি সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল।
ঘটনা এক ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও জেলা পরিষদের কোন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে ও হাসপাতলে দেখা যায়নি। এমন কি কোন কর্মকর্তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ধসে পরা ছাদের নিচে নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে নেমেছেন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছুটে যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রফু চৌধুরী অপু, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শানে আলম প্রমুখসহ জনপ্রতিনিধি।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাদের নিচ থেকে আরো এক জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আরিফ হোসেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ধসে পড়া ছাদের নিচে আরো শ্রমিক আটকে রয়েছে। তবে তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে জানা যায়নি।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদর জোনে মেজর মো: রিয়াদুল ইসলাম জানান, আরো কয়েক জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। সবাইকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আরিফুর রহমান জানান, নিহত ২শ্রমিকের মরদেহ আধুনিক জেলা সদর হাসাপাতালে রয়েছে। উদ্ধার হওয়া বাকি সদস্যদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা জানান, ঘটনাটি শুনার সাথে সাথে প্রত্যক্ষ সরেজজমিনে উদ্ধার কাজে অব্যাহত রেখেছে এবং এলাকাটিকে পুলিশ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় রেখেছে। হাসপাতাল এলাকায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রুফ চৌধুরী অপু বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্মান ঠিকাদার ও প্রকৌশলী ব্যক্তিত্ব যে হোক সঠিক প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি। এখন আর শ্রমিক আটকে আছে কিনা তা আমরা প্রত্যক্ষ সরেজমিনে উদ্ধারে কাজে দেখছি। ’ তিনি নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন জানান।
২০১৮সালের দিকে পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভবনটার সামনের অংশে ১৬জন শ্রমিক কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে। অর্থাৎ নির্মাণাধীণ ভবেন ১৬জন শ্রমিক কাজ করছিলো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন