গজলডোবা খুলে দিল ভারত, ফুলেফেঁপে উঠছে তিস্তা
গত পাঁচ দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে ফুলেফেঁপে উঠছে তিস্তা। এর মধ্যে আবার ভারত গজলডোবা ব্যারাজের ৫৪টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়ায় ভয়াল রূপ ধারণ করেছে উত্তরের জনপদের এ নদী।
আজ রোববার সকালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে পানি বৃদ্ধি। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাস কেন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর ছিল। পরে রাত ১০টার দিকে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে চলে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি সূত্র জানায়, ভারত তাঁর গজলডোবা ব্যারাজের ৫৪টি স্লুইসগেট খুলে দিয়েছে। গজলডোবা ব্যারাজের উজানে ভারতের দো-মোহিনী পয়েন্টে কয়েক দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ হচ্ছিল। সেই সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। চাপ সামলাতে গজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেওয়া হয়।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভারত তাদের অংশের তিস্তা নদীতে রেড অ্যালার্ট জারি করে। বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজের উজানের ভারত তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় ও ভারতের দো-মোহিনী থেকে বাংলাদেশ কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় জারি হয়েছে ওই সতর্কতা সংকেত।
এদিকে উজান হতে ঢল আসছে—এমন খবরে তিস্তা অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। ভারত গজলডোবা খুলে দেওয়ার খবরে বাংলাদেশে তিস্তা অববাহিকায় সতর্কতা জারি করেছেন পাউবো ডালিয়া পয়েন্টের কর্মকর্তারা।
পাউবোর ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিস্তায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার গ্রাম ও চর এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডিমলা খালিশাচাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুরের একটি সাইট বাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। একই ইউনিয়নের ছোটখাতা ও বানপাড়া গ্রামের ঘরবাড়ির টিনের চালের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
পূর্বছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বলেন, নদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম জানান, উজানের ঢলের খবরে তিস্তা অববাহিকার উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নদীবেষ্টিত গ্রাম ও চরের পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত হয়েছে তিস্তার ঝাড় শিংহেরশ্বর চর, কিসামতের চর, দোহলপাড়া, ফকোতের চর, বাঘের চর, একতার বাজার চর, দক্ষিণ খড়িবাড়ী, উত্তর খড়িবাড়ী, ছোটখাতা, বাইশপুকুর, ছাতুনামার চরসহ তিস্তার অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো।
শনিবার ব্যারাজের উজানে খালিশাচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ছোটখাতা ও টেপাখড়িবাড়ী ইউপির উত্তর খড়িবাড়ী গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি রয়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার পরিবার। তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর স্বপন বাঁধ বিলীন হয়েছে। বাঁধটি বিলীন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে ১০টি পরিবারের বসতভিটা ও বাড়িঘর।
চার দিন ধরে টানা অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে পানিবন্দি গ্রামে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন তলিয়ে গেছে পানিতে। ফলে আমাশয় ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকেই। পানিবন্দি গৃহবধূদের চৌকির ওপর চুলা বসিয়ে রান্না করতে দেখা গেছে।
এদিকে, প্লাবিত গ্রামগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ক্যাম্প বসিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাসহ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন