গুরু আছি শিষ্য নাই, শিষ্য তৈরি করবার পারলাম না
ফার্নিস মেশিন মেরামতের কাজ করে জীবন চলে বাচ্চু মিঞার। পুরো নাম মোহাম্মদ বাচ্চু মিঞা, বাবা আব্দুল মালেক। বাচ্চু মিঞার সাথে দেখা হলে তিনি বলেন, বয়স শেষের দিকে অথচ শিষ্য তৈরি করবার পারলাম না।’ গুরু আছি শিষ্য নাই” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অনেককেই এ কাজটি শেখানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেনি। ইচ্ছে ছিল একজন শিষ্য তৈরি করে একাজ থেকে অবসর নিবো।
ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার ভান্ডারা গ্রামে কুলিক নদীর পাড়ে কুলিকপাড়ায় বর্তমান বসবাস করছেন বাচ্চু মিঞার। আনুমানিক বয়স প্রায় (৬৮)বছর। ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বাচ্চু মিঞা।
জানা যায় ১২/১৪ বছর বয়সেই কর্মজীবন বেছে নেন বাচ্চু মিঞা। এক সময় রিক্সা ও সাইকেলের মেকানিকের কাজের বেশ চাহিদা দেখে এ কাজটি বেছে নেন তিনি। দীর্ঘদিন সাইকেল/রিক্সা মেকার হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন। এরপর ১৯৮৫ সালের দিকে নতুন ভাবে শুরু করেন ফার্নিস মেশিন মেরামতের কাজ।
স্বর্ণের দোকানিরা এ মেশিনটি সচরাচর ব্যবহার করে থাকে। আর তিনি তার জীবন যৌবন এই কাজেই ব্যয় করছেন এখন পর্যন্ত। বাচ্চু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বর্ণকারের দোকানে ফার্নিস মেশিনের কোন সমস্যা হলে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তা মেরামত করে দেন।
যার ফলে স্বর্ণকারকে নতুন কোন মেশিন কিনতে হয় না। মেরামত করা মেশিনটি আবার নতুনের মত কাজ করে। মেরামত বাবদ দোকানির কাছ থেকে দুই থেকে তিনশত টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে পান। দিনে ৬থেকে ৭টি মেশিন মেরামত করতে পারেন বাচ্চু মিঞা।
যৌবনকালের স্মৃতি মনে করে (২১ মে) রবিবার সকাল বেলা বাচ্চু মিঞা বলেন, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন স্বর্ণকার দোকানের ফার্নিস মেশিন আঞ্চলিক ভাষায় ভাতি মেশিন একমাত্র তিনিই মেরামত করেন। মাঝে মাঝে এসব মেশিন ঠিক করার জন্যে দিনাজপুর পর্যন্তও গিয়েছেন তিনি। বলা যেতে পারে তিন জেলাতেই বাচ্চু মিঞার মেকানিক কদর বেশ ভালোই রয়েছে। এখন বয়সের ভারে তিনি তেমন আর শ্রম দিতে পারেন না।
তাই বাচ্চু মিঞা গল্পের ছলে বলেই ফেললেন, সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে হয়ত বাচ্চু মিঞা না থাকলে নতুন কেউ একাজে এসে হাল ধরবে। কোন কাজেই কারো জন্য পরে থাকে না। কেউ না কেউ একাজে দক্ষ হয়ে যাবে আর এটাই স্বাভাবিক।
এর মাঝে বাচ্চু মিঞার নিজ হাতে তৈরি করা শিষ্য হয়ত তার নিজ চোখে দেখা হলো না বললেন। বাচ্চু মিঞা চায় মরার আগে হলেও এমন একজন শিষ্য তৈরি করে রেখে যেতে চান তিনি যা পরবর্তীতে বাচ্চু মিঞাকে গুরু হিসেবে সম্মান রাখবেন। বর্তমানে বাচ্চু মিঞা শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ্য হলেও ফার্নিস মেশিন মেরামত করে কোনমত জীবন যাপন করছেন। আগের মত তেমন আর বিভিন্ন যায়গায় মেশিনের কাজে দৌড়াঝাপ করতে পারছেন না।
কারন এ বৃদ্ধ বয়সে এসে খুব একটা বেশি কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না বাচ্চু মিঞা। বর্তমানে অভাব আর অনটন যেন পিছপা ছাড়ছে না বাচ্চু মিঞার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন