চুয়াডাঙ্গায় আসা বিদেশি গমের ভেতর ২৮ বস্তা-সিমেন্ট বালু!
বিদেশী গমের ভেতর ২৮ বস্তা বালু এসেছে চুয়াডাঙ্গায়। তার মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইট-সিমেন্টের জমানো গুঁড়ো। এমন অবাক করা কাণ্ডে চুয়াডাঙ্গা খাদ্য বিভাগসহ জেলাজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে।
খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্য গোডাউনের উদ্দেশ্যে (০৫ ফেব্রুয়ারী) রোববার ছয়টি ট্রাকে আসা এসব বিদেশী গমের বস্তার ভেতর থেকে এসব বালু, সিমেন্ট-বালুর জমানো গুঁড়ো ও ইট উদ্ধার করা হয়।
এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ওই ছয়টি ট্রাকসহ ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক রাখা হয়েছে। প্রমাণের স্বার্থে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে যারাই এ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা তিনশ টন গম খুলনার চার নং ঘাট থেকে ছয়টি ট্রাকে লোড করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাদ্যগুদামে আসার কথা। দ্বিতীয় চালানে (০৫ ফেব্রুয়ারী) রোববার ১০০ টন গম আসে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে।
চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদামে সকাল ১০টার দিকে গম আনলোডের সময় একটি ট্রাকে গমের বস্তার সারিতে বালুভর্তি ৭টি বস্তা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই জেলার খাদ্য বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দুপুর পর্যন্ত সব ট্রাকগুলো আনলোড করার সময় একে একে বালুবোঝাই ২৮টি বস্তা পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গুদামের শ্রমিক মুক্তার আলী বলেন, আমরা প্রথমে একটি ট্রাকে কয়েকটি বালুর বস্তা পাই। এরপরই আমাদের সন্দেহ হলে সেসময় সব ট্রাকেই চেক করতে গেলে কমবেশি বালুর বস্তা উদ্ধার হতে থাকে। শেষমেশ ২৮ বস্তা বালু পাওয়া যায়।
একটি ট্রাকের চালক রাব্বী হোসেন ও হেলপার মেহেদী হাসান বলেন, খুলনা থেকে গমের ট্রাক লোড হওয়ার পর আমরা সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আনি। ইট-পাথর বা বালু কীভাবে ট্রাকে আসলো আমরা তা জানি না।
চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, গমের বস্তা লোড হওয়ার পর খুলনা থেকে ব্রিজ স্কেলে ওজন শেষে চালান করে দেয়া হয়। চালান অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় আবারও ওজনের পর বস্তা আনলোড করা হয়। সেসময় গমের পরিবর্তে ২৮টি বস্তায় বালু-সিমেন্টের গুঁড়ো পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার সরকার এন্টারপ্রাইজ, জোনাকি এন্টারপ্রাইজ ও সানরাইজ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর গোডাউনে মোট ৩০০ টন গম পাঠানোর কথা ছিল। সেই অনুযায়ী প্রথম কিস্তির ১০০ টন গম আসে গত শুক্রবার। দ্বিতীয় কিস্তির ১০০ টন গম (০২ ফেব্রুয়ারী) রোববার ভোরে চুয়াডাঙ্গায় আসে। কিন্তু গমের ভেতর বালুর বস্তা দেখে চমকে যায় এখানকার কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পর ছয়টি ট্রাকসহ চালক ও হেলপারকে আটকে রাখা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল হক শাহীন বলেন, এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করবো। তারা সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে ছয়টি ট্রাক এবং তার চালক ও হেলপারকে ছাড়া হবে না। প্রয়োজন হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব তাদের বিরুদ্ধে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য দুপুরেই তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা বানু আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ। তারা আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন