চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও একটি সফলতার গল্প আছে বাংলাদেশের
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপত্তিকে নাকচ করে আসছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন দুর্যোগের জন্যই পরিচিতি পেয়ে আসছিল বাংলাদেশ।
চরম দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে দেশটিকে।
মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও এখন বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক সফলতার গল্প আছে। যদিও তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব কমই নজর কেড়েছে।
বুধবার টোকিওভিত্তিক ব্যবসায়িক জার্নাল নিক্কে এশিয়ান রিভিউয়ের প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলেছে-দ্রুত বর্ধনশীল উৎপাদন খাতের সহায়তায় প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ শতাংশের বেশি বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত জুন থেকে যা ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
‘আর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প চীনের পরই বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।’
বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অগ্রগতি শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৪ সালে ব্যাপক অনাহারে থাকা দেশটি এখন ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে এবার এক হাজার ৭৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এ সময় চরম দারিদ্র্যের হার ১৯ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
‘চলতি বছরই আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বলছে-২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।’
প্রতিবেদনটি বলছে-অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অর্জন সরকারের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
‘দেশটির রফতানি বাড়ছে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে। গত অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৭০ কোটি ডলার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রফতানি যেন পাঁচ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
তিনি বলেন, আমাদের জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কেবল অব্যাহতই থাকছে না, বরং বেড়েই চলছে। আগামী পাঁচ বছরে আমরা প্রত্যাশা করছি- আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আমার আশা- ২০২১ সালে আমরা ১০ শতাংশে পৌঁছাব।
নিক্কে এশিয়ান রিভিউ বলছে-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিচ্ছেন ২৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। বছরে রেমিট্যান্স আয় ১৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। চলতি বছর রেমিট্যান্স আসবে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
‘সরকার এখন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে ১১টির কাজ শেষ হয়েছে, নির্মাণাধীন আছে ৭৯টি।’
জার্নালটি জানায়, তবে চিত্তাকর্ষক এসব পরিসংখ্যানের আড়ালে লুকিয়ে আছে কঠিন বাধা— অবকাঠামো সমস্যা থেকে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন। ৩০ ডিম্বেরের নির্বাচন সামনে রেখে তা আরও তীব্র হয়েছে।
হংকংভিত্তিক ব্রোকারেজ সিএলএসএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টোফার উড বলেন, বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নির্বাচনটা শেষ হয়ে পরবর্তী সময়ে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকলে বাংলাদেশ হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের গল্প।
অবশ্য ঢাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রধান নির্বাহীরা বলছেন, রাজনৈতিক সংকটে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন