ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ঠেকানোর পথ খুঁজছে রেলওয়ে
সিলেট থেকে ট্রেনে করে ঢাকা ফিরছিলেন মুনমুন চৌধুরী। খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সময় তার আসনের পাশের জানালা ভেঙ্গে কাচের টুকরো মুখে, শরীরে আঘাত করে।
যাত্রীদের সহায়তায় রক্ত আর শরীর থেকে কাঁচের টুকরো সরাতে পারলেও প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে বাকি পথটুকু তিনি আইলে বসে ঢাকায় পৌঁছান।
”এতো ভয় পেয়েছিলাম যে এরপর থেকে আমি আর ট্রেনের জানালার কাছে বসতে পারি না। অকারণে কোন অমানুষ ছাড়া কারো পক্ষে এভাবে ট্রেনে ঢিল ছোড়া সম্ভব নয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মুনমুন চৌধুরী।
বাংলাদেশে চলন্ত ট্রেনে প্রায়শই পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে, ফলে আহত হয় যাত্রীরা। এমনকি জানালা বন্ধ রেখেও রেহাই পান না যাত্রীরা – এসব ক্ষেত্রে ছুড়ে দেয়া পাথরের কারণে জানালার কাঁচ ফেটে আহত হন যাত্রীরা।
এ রকম পাথর ছোড়ার ঘটনায় যাত্রী মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে বলেও খবর রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী ট্রেনে যখন ভ্রমণ করছিলেন, তখন তাতে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা ঢিল ছুড়েছিলেন, ফলে ট্রেনটির কাচ ভেঙ্গে যায়। স্পিকার অবশ্য ওই ঘটনায় নিরাপদেই ছিলেন।
রোববার রাতে পদ্মা ট্রেনে ছোড়া পাথরে চার বছরের একটি শিশু আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে রেলপথমন্ত্রী গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবারই দেয়া ওই বিবৃতিতে মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেছেন, দুষ্কৃতকারীরা চলন্ত ট্রেনে ঢিল মেরে নিরাপদ বাহনকে অনিরাপদ করে তুলছে। যাতে ট্রেনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবনও বিপন্ন হচ্ছে।
এ ধরণের অপরাধীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে ট্রেনে পাথর ছুড়ে ২,০০০ বেশি জানালা-দরজা ভাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।
কারা-কেন ট্রেনে ঢিল ছোড়ে?
২০১৩ সালে চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলে প্রকৌশলী প্রীতি দাশ নিহত হওয়ার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
সেই কমিটির সদস্য রেলওয়ে কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, দুষ্কৃতকারীরা ইচ্ছা করে ট্রেনে ঢিল ছুড়ে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।
ওই ঘটনায় যে দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা যে শুধুমাত্র অপরিণত শিশুরাই করে তা নয়, বরং অনেকে ডাকাতি ও ট্রেনের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই কাজ করে।
রেলপথমন্ত্রী বলছেন, বর্তমানে রেলওয়েতে অনেক কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন রুটে নতুন নতুন ট্রেন চালু করা হচ্ছে।
কাজেই ঢিল ছোড়ার বিষয়টি স্বার্থান্বেষী মহলের কোন ষড়যন্ত্র কি-না, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি তিনি আহবান জানিয়েছেন।
রেলওয়ে কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”এখানে একটি বড় সমস্যা যে, কারা এই ঢিল ছুড়ছে, তাদের সনাক্ত করা। কারণ বেশিরভাগ ঘটনা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বা রাতের অন্ধকারে ঘটছে।”
ফলে যেসব স্থান দিয়ে ট্রেন চলাচল করে, সেখানকার জনপ্রতিনিধি এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন রেল কর্মকর্তারা।
রেলওয়ে আইনে কী রয়েছে?
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
তবে পাথর নিক্ষেপে কারো মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
যদিও এসব আইনে কারো শাস্তির কোন নজির নেই বলেই কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন