ঢাকা উত্তর সিটির আলোচনায় অর্ধডজন প্রার্থী
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উপ-নির্বাচনে আলোচনায় আছেন বিভিন্ন দলের অর্ধডজনেরও বেশি প্রার্থী। অনেকে এরইমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন-বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রপের সত্ত্বাধিকারী এ কে আজাদ, হক গ্রুপের কর্ণধার আদম তমিজি হক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, ঢাকার সাবেক মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জুরের ছেলে ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ এবং ব্যান্ডদল মাইলসের ভোকালিস্ট শাফিন আহমেদ।
এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটৌকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের বড় বোন সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নানাভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন কৌশলে প্রচারও করে বেড়াচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সফল ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষ দলীয় মনোনয়ন পেতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে এক্ষেত্রে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কথাই শেষ কথা বলে বিবেচিত হবে।
আগামী সাংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর এ উপ-নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় পরীক্ষা বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। স্বয়ং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যদি ফাইনাল খেলা হয়, তাহলে সিটি নির্বাচন হচ্ছে সেমি ফাইনাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় ও ভোটের ব্যবধান বেশি হওয়ায় প্রেসিডিয়াম পরিষদের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এর কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে চাই, কেন ভোটের ব্যবধান এত বেশি।’ সেই বিবেচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াকে আওয়ামী লীগ হালকাভাবে নিবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরই জয় হবে। কেননা, ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই।’
অবশ্য দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে তিনিও নিশ্চিত করে কিছু না বলে জানান, মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, সেটা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। এখানে দলীয় সভাপতির সিদ্ধান্তই সব। দলীয় ফোরামে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। এমন একটি নির্বাচনের আগে অনেকের নাম সামনে চলে আসবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে, এতোটুকু বলতে পারি, দল থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমাদের আনুষ্ঠানিক কথা হয়নি। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেনো, অবশ্যই তাকে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এবং জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’
দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এমন আলোচনা হবেই। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যোগাযোগ রাখছে। কেউ ফোন করছেন, আবার কেউ অফিসে- এমনি কি বাসায়ও চলে আসছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে মনোনয়ন বোর্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেরা খাতুন বলেন, ‘নেত্রী যাকে ভাল মনে করবে তিনিই মনোনয়ন পাবেন। আমরা সবাই তাকে জিতিয়ে আনার জন্য কাজ করব।’
জানা গেছে, বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন জোরালো হয়েছে যে, বাতাসে ভাসছে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন আতিকুল ইসলামই পাচ্ছেন। এমনকি শেখ হাসিনা গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন বলেও আতিকুল সমর্থকদের দাবি। তবে তার এ দাবি অনেকটাই হাল্কা করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কাজ করতে বলেছেন। কাজ করতে বলা আর মনোনয়ন দেওয়া- এক কথা নয়।’
এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম জানান, মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরের কোন কোন সমস্যাগুলোকে প্রাধান্য দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজগুলোকে সমাপ্ত করতে চান তিনি।
হামীম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদ মেয়র নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে হক গ্রুপের কর্ণধার আদম তমিজি হক জানান, তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শেই তিনি এগিয়ে চলবেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ডিএনসিসিতে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যান্ডদল মাইলসের শাফিন আহমেদ। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) নামের একটি দল তাকে প্রার্থী করবে বলে জানান তিনি। তবে নির্বাচন কমিশনে এই দলের নিবন্ধন নেই, তাই তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই ভোটে অংশ নিতে হবে।
বিএনপি থেকে গত নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নাম শোনা যাচ্ছে। বুধবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুও জানান, তাবিথই ঢাকা উত্তরে বিএনপির যোগ্য প্রার্থী। তারই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকও আলোচনায় আছেন। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে রাজি আছেন বলে তার একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। রুবানা হক স্বামীর গ্রীণ ঢাকার স্বপ্ন পূরণ ও অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে প্রত্যয়ী।
এছাড়া বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক মাহি বি চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাকেও নির্বাচনে দেখা যেতে পারে। যদিও মাহি বি চৌধুরীর এখনও পর্যন্ত জোরালো কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও নির্বাচন করতে পারেন। আবার প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটৌকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিমের নামও আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।
ঢাকার সাবেক মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জুরের ছেলে ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থও শেষ পর্যন্ত ২০ দলের প্রার্থী হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের অকাল মৃত্যুতে মেয়র পদটি শূণ্য হয়। তাই এখানে উপ-নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন