তাফসীরে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম: পবিত্র সূরা আল কদরের তাফসীর
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অফুরন্ত দরুদ শরীফ ও সালাম। পবিত্র আয়াত শরীফ: ৫, পবিত্র রুকু মুবারক: ১ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বরকতময় স্থানে নাযিল করেছেন।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এই পবিত্র সূরা মুবারক ৯৭তম নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাযিলের ধারাবাহিকতায় এই পবিত্র সূরা মুবারক ২৫তম।
ছহীহ তরজমা
খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।
খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করে শুরু করছি যিনি পরম দয়ালু, করুণাময়।
(১) নিশ্চয়ই আমরা উনাকে (পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে) নাযিল করেছি পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক-এ।
(২) আপনি কি জানেন, পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক কি? অর্থাৎ আপনি তো জানেন পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার সম্পর্কে।
(৩) পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক হাজার মাস থেকেও উত্তম।
(৪) উনাদের মহান রব তায়ালা উনার মুবারক অনুমতিক্রমে পবিত্র রূহ মুবারক (হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম) ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা এ মুবারক রাতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, প্রত্যেক কাজে বা হুকুমে।
(৫) শান্তি মুবারক নাযিল হয়। উহা (পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক) ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত (বলবৎ থাকে)।
সংক্ষিপ্ত ছহীহ্ তাফসীর বা ব্যাখ্যা:
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় উনার উম্মত উনাদেরকে অনেক ফযীলত দিয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ ফযীলত এই ‘পবিত্র সূরা আল ক্বদর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন।
এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম কুরআন শরীফ নাযিল করেন, বান্দাদের হিদায়েতের জন্য। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, বান্দারা যাতে অল্পতে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত মুবারক, মা’রিফাত মুবারক এবং উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক, তায়াল্লুক মুবারক ও নিছবত মুবারক সর্বোপরি উনাদের রিযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে পারেন সেজন্য বিশেষ রাত্রি মুবারক দান করেন, যাঁর নাম মুবারক মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই দিয়েছেন তাহলো পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ।
এই পবিত্র সূরা শরীফ উনার প্রথম পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম কুরআন শরীফ নাযিল সম্পর্কে বলেন। অর্থাৎ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ উনার মধ্যেই পবিত্র কুরআন শরীফ সম্মানিত লওহে মাহফুজ থেকে একসাথে পূর্ণ কালামুল্লাহ শরীফ সম্মানিত বাইতুল ইজ্জত মুবারক যা সামায়ে দুনিয়া অর্থাৎ পৃথিবীর আকাশে অবস্থিত সেই ঘর মুবারক-এ নাযিল করেন।
এর ব্যাখ্যায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে। আর পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিন উনাদের বেজোড় রাত্রি মুবারক উনাদের কোন এক রাত্রি মুবারক উনার মধ্যে সংগঠিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ ও পবিত্র সূরা আল ক্বদর শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের অর্থ একই।
কেউ কেউ পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ যার অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রাত্রি মুবারক উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, বরকতময় রাত্রি মুবারক উনার অর্থ হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যাখ্যাটি শুদ্ধ ও সঠিক নয়।
প্রকৃতপক্ষে ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত বরকতময় রাত্রি মুবারক বলতে পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক উনাকে বুঝানো হয়েছে। যা বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক উনাকে লাইলাতুত্ তাজবীয বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ফায়ছালা করার রাত্রি বলা হয়।
আর পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ উনাকে বলা হয় লাইলাতুত্ তানফীয বা হুকুম জারী করার রাত্রি। অর্থাৎ পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ফায়ছালা করেন পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করা সম্পর্কে। আর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেন।
অর্থাৎ, পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক উনার মধ্যে ফায়ছালা করা হয়, পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে পবিত্র লওহে মাহফ‚য থেকে পবিত্র বাইতুল ইজ্জত শরীফ উনার মধ্যে নাযিল করা হবে আর তা নাযিল করা হয় পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার মধ্যে। অত:পর ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) থেকে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ পর্যায়ক্রমে যমীনে নাযিল শুরু হয়। যা ২৩ বছরব্যাপি নাযিল হয়ে পূর্ণতা লাভ করে।
আর দ্বিতীয় পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো জানেন, পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার ফযীলত কতটুকু? যা আপনার উসীলায় আপনার উম্মতদেরকে দান করা হয়েছে।
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন। যা পবিত্র মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলম মুবারক হাদিয়া করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং তৃতীয় পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার ফযীলতের পরিমাণ বর্ণনা করেন। আর তাহলো পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক হাজার মাস থেকেও উত্তম। আর হাজার মাস হলো ৮৩ বছর ৪ মাস। অর্থাৎ কেউ যদি পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উনার মধ্যে ইবাদত-বন্দিগী করে তাহলে সে ৮৩ বছর ৪ মাস বা হাজার মাস ইবাদত-বন্দিগী করে যত ফযীলত লাভ করার কথা তার চেয়ে অনেক বেশী ফযীলত লাভ করবে।
আর চতুর্থ ও পঞ্চম পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার খুছ‚ছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন। আর তাহলো পবিত্র ক্বদর উনার রাত্রি মুবারক উনার ফযীলতের কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে একদল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামসহ যমীনে পাঠান।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম তিনি একদল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামসহ যমীনে আসেন মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে চারখানা পতাকা নিয়ে। যা স্থাপন করেন পর্যায়ক্রমে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে একখানা, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে একখানা, পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ উনার মধ্যে একখানা, আরেকখানা পবিত্র সিনাই প্রান্তর উনার মধ্যে অবস্থিত পবিত্র তূর পাহাড় উনার উপর।
আরো নিয়ে আসেন রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও সালাম বা শান্তি; যা মাগরিব থেকে শুরু করে ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই নাযিল করা হয়।” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, কেউ যদি পবিত্র লাইলতুল ক্বদর উনার মধ্যে ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে ইবাদত-বন্দিগী করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই ব্যক্তির জীবনের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। যার ফলে বান্দা বা উম্মতরা রহমত, বরকত, মাগফিরাত, সালাম ইত্যাদি লাভ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি হাছিলে সমর্থ হয়। সুবহানাল্লাহ!
বরকতময় শানে নুযূল:
‘পবিত্র আল ক্বদর শরীফ’ উনার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে ইবাদত-বন্দিগী অর্থাৎ জিহাদ, নামায-কালাম, যিকির-ফিকির, পবিত্র সুন্নত উনার ইত্তিবা সর্বপ্রকার হুকুম-আহকাম দৃঢ়তার সাথে পালন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য উৎসাহিত করতেন।
এই উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে তিনি পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং উনাদের উম্মতগণের ইবাদত-বন্দিগী সম্পর্কে বর্ণনা করতেন। এ প্রসঙ্গে একবার বলেন, বনী ইসরাইলের এক মুজাহিদ যার নাম ছিল শামাউন। তিনি একাধারা এক হাজার মাসব্যাপী দিনে রোযা রেখে পবিত্র জিহাদ করেছেন এবং সারা রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দিগী করেছেন। আর বনী ইসরাইলের আর এক আবিদ যিনি একাধারা এক হাজার মাসব্যাপী ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন তাও বলেন।
আরো উল্লেখ করেন, বনী ইসরাইলের চারজন নবী হযরত আইয়‚ব আলাইহিস সালাম, হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস সালাম, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম, হযরত হিজকীল আলাইহিস সালাম উনারা প্রত্যেকেই আশি বছরব্যাপী একাধারা ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। এরমধ্যে এক মুহ‚র্তের তরেও বিরত থাকেননি। আরো বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি একাধারা পাঁচশত মাস সারা বিশ্বব্যাপী উনার কর্তৃত্ব পরিচালনা করেন।
আর মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত সিকান্দার যুল র্ক্ব্নাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও একাধারা পাঁচশত মাস সারা বিশ্বব্যাপী উনার কর্তৃত্ব পরিচালনা করেন। ইত্যাদি উৎসাহমূলক ওয়াক্বিয়া বা ঘটনা শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
উনারা লম্বা হায়াত মুবারক পেয়েছিলেন যার কারণে উনাদের পক্ষে হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাস বা ৮০ বছরব্যাপী একাধারা পবিত্র জিহাদ, নামায-কালাম, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দিগী করা সহজ ও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আমরা এবং যারা আমাদের সমসাময়িক উনারা ৬০, ৭০, ৮০ বছর হায়াত লাভ করে থাকি বা থাকেন, তাহলে আমাদের পক্ষে কি করে সম্ভব হাজার মাস বা ৮০ বছরব্যাপী একাধারা ইবাদত-বন্দিগী করা এবং তার ফযীলত হাছিল করা।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিন্তিত হলেন, সত্যিই তো উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যদি এত অল্প হায়াত পায় তাহলে তারা কি করে একাধারা হাজার মাস বা ৮০ বছর ইবাদত-বন্দিগী করে পূর্ববর্তী উম্মতের মত বুযূর্গী, সম্মান বা ফযীলত লাভ করবে।
কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই অন্যত্র বলেন, উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তাহলে কি করে উনাদের এই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় থাকবে?
তখন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘পবিত্র সূরা আল ক্বদর শরীফ’ নাযিল করেন। যার মাধ্যম দিয়ে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অল্প সময়ে ইবাদত-বন্দিগী করে পূর্ববর্তী উম্মতের হাজার মাস ইবাদত-বন্দিগী করার চাইতে বেশি ফযীলত ও বুযূর্গী হাছিল করতে পারবেন।
এই পবিত্র সূরা শরীফ যখন নাযিল হলো তখন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনালেন। উনারা শুনে ইতমিনান লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
ইবরত ও নছীহত মুবারক:
‘পবিত্র সূরা আল ক্বদর শরীফ’ উনার থেকে এই ইবরত ও নছীহত মুবারক হাছিল করতে হবে যে, উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে মশগুল থেকে উনাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখে।
কারণ, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার উম্মত উনাদেরকে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহুরিল আযম শরীফ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ বা পবিত্র রজবুল আছম্ম শরীফ উনার ১লা জুমুয়া উনার রাত্রি মুবারক, পবিত্র লাইলাতুল মি’রাজ শরীফ বা পবিত্র ২৭শে রজবুল আছম্ম শরীফ উনার রাত্রি মুবারক, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম পবিত্র ইছনাইনিল আযীম শরীফ, পবিত্র জুমুয়া শরীফ, পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফ উনার রাত্রি, পবিত্র লাইলাতুল ঈদাইন শরীফ বা দুই পবিত্র ঈদ উনাদের দুই রাত্রি মুবারক, পবিত্র আশুরা শরীফ উনার দিন, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস ও পবিত্র ক্বদর মুবারক উনার রাত্রি মুবারক ইত্যাদি বিশেষ মাস, দিন ও রাত্রি মুবারক দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো নছীহত মুবারক হাছিল করতে হবে তাহলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথাযথ তা’যীম-তাকরীম মুবারক, সম্মান-ইজ্জত মুবারক করতে হবে। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলেন, তোমরা আমার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মান মুবারক করো, খিদমত মুবারক করো এবং উনার ছানা-সিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা দায়িমীভাবে। তাহলেই মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করে উম্মত হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে।
মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে হলে রূহানী কুওওয়াত মুবারক হাছিল করতে হবে। আর রূহানী কুওওয়াত মুবারক হাছিল করতে হলে হক্কানী-রব্বানী শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ক্বল্বী যিকির ও ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সেই তাওফিক দান করুন। আমীন!
(দলীলসমূহ: তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর শরীফ, তাফসীরে কুরতুবী শরীফ, তাফসীরে আবী হাতিম শরীফ, তাফসীরে নিশাপুরী শরীফ, তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ, তাফসীরে বাগবী শরীফ, তাফসীরে মায়ালিম শরীফ, তাফসীরে রূহুল মায়ানী শরীফ, তাফসীরে রূহুল বয়ান শরীফ, তাফসীরে মাযহারী শরীফ, আমীনিয়া শরীফ, ইতকান শরীফ, বুখারী শরীফ শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ ও মিরকাত শরীফ)।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন