অক্টোবরে পুরোদমে চালুর পরিকল্পনা

থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে বেবিচক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) হস্তান্তর করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরই পুরোপুরি চালু করতে সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে বেবিচক। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে অক্টোবরেই পুরোদমে চালু হবে এ টার্মিনাল।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা আছে এ বছরের অক্টোবরেই থার্ড টার্মিনাল চালুর। জাপানি কোম্পানি এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় তারা এটি পরিচালনা করবে। সেই চুক্তিটা সম্পন্ন হতে একটু সময় লাগছে। জুলাইয়ে জাপানি কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে। এরপর তারা কাজ শুরু করবে। তাদের কাজের প্রস্তুতিতে যদি বিলম্ব হয়, তাহলে কিছুটা দেরি হতে পারে।

ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগামী শনিবার টার্মিনালের সবকিছু বুঝে নেওয়া হবে।’ গত বছরের ৭ অক্টোবর এ টার্মিনালের সফট ওপেনিং বা আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনীর মাধ্যমে পর্দা ওঠে মেগা প্রকল্পটির। এখন টার্মিনাল পুরোদমে চালুর অপেক্ষায় যাত্রীরা। সে সময় বেবিচক জানিয়েছিল, ২০২৪ সালেই পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হবে থার্ড টার্মিনালের। সে লক্ষ্য ধরেই এগোচ্ছে বেবিচক।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রীধারণ ক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হয়েছে। টার্মিনাল ভবন ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের।

ভবনের ভিতরে রয়েছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। নির্মাণাধীন টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর লাগানো হয়েছে। যারা বিমানবন্দরের ভিতরে দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোয় বেশি যাত্রীপ্রবাহের জায়গায় এ ধরনের এসকেলেটর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল। থাকবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে গন্তব্যে যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকার যে কোনো স্টেশন থেকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরে বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে।

 

টার্মিনালটির প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকছে একটি করে বেবিকেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভিতর মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকছে। এ ছাড়া শিশুদের খেলার জন্য স্লিপার-দোলনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। হেলথ ইন্সপেকশন সুবিধা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া থাকছে। টার্মিনালের ভিতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং ঋণ হিসেবে জাপানের জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় পর্যাপ্তসংখ্যক এসকেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হয়েছে। থাকছে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কার পার্ক। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হয়েছে অনন্য নান্দনিকতা।