ঘরে বসে মিলছে বহু অফারের ফ্রি সিমকার্ড, কিনলেই বিপদ!

বিনামূল্যে সিমকার্ড, সঙ্গে বিভিন্ন অফার! এর জন্য কোথায়ও যেতে হচ্ছে না, মিলছে ঘরে বসেই। সিম কার্ডের মতো এত বহুল ব্যবহৃত একটা জিনিস কোনো টাকা ছাড়াই এত সহজে পেলে নিতে সমস্যা কোথায়? এমন চিন্তা থেকেই খুলনার বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সিমকার্ড সংগ্রহ করেছেন। এরপর বেশ একে একে বেশ কয়েকজন পড়েছেন বিপদে!

খুলনার শিরোমণি গিলাতলা এলাকার বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সী লাইলি বেগম। কখনো বাড়ির গণ্ডি পার না হলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ি থানায় তার বিরুদ্ধে পড়েছে প্রতারণার অভিযোগ। রাকিব নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে অনলাইনে পণ্য বিক্রির কথা বলে ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

লাইলি বেগম বলেন, ‌‘গত ১৩ মার্চ বিনামূল্যে সিম বিক্রির কথা বলে তার আঙ্গিনায় আসেন এক যুবক। নানান অফারের প্রলোভন দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক তথ্য নিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন করেন। তবে পরবর্তীতে আঙ্গুলের ছাপ অস্পষ্টের অজুহাতে কোনো সিম না দিয়েই চলে যায় ওই যুবক। আর সেই সিম ব্যবহার করা হয়েছে দিনাজপুরের রাকিবের অর্থ লোপাটে।’

শুধু লাইলি বেগম নন, এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন গিলাতলা এলাকার অর্ধশত পরিবার।

প্রতারণার শিকার পান্না মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন আগে গলায় একটি সিম কোম্পানির আইডি কার্ড ঝুলিয়ে মাস্ক পরা এক যুবক আমাদের এলাকায় আসে। সিম কিনতে কোনো টাকা লাগবে না বরং সিমে থাকবে ১০০ মিনিট টকটাইম ও ৬ জিবি ইন্টারনেট। এমন অফার দিলে আমরা জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের তাহলে লাভ কী? সেই যুবক জানায়, একাধিক সিম বিক্রি করলে তাদের কমিশন থাকে। এরপর আমিসহ প্রতিবেশীরা মোট ৭-৮ জন সিম নিতে চাই। এই ৭-৮ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র, আঙ্গুলের ছাপ, চোখের আইরিশের তথ্য নেয় ওই যুবক। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বলে আঙ্গুলের ছাপ অস্পষ্ট তাই সিম দেয়া যাবে না। ৭-৮ জনের মধ্যে মাত্র ২ জনকে সিম দেয়। তারপর সে চলে যায়।

তিনি জানান, তাদের এলাকার আরও ৫০-৬০ জনকে এভাবে সিম বিক্রির কথা বলে সিম দেয়নি। দুই দিন আগে লাইলি বেগমকে থানা থেকে ফোন দিয়েছে, এখন তারাও ভয়ে আছেন।

তিনি বলেন, আমরা এলাকাবাসী সবাই মিলে বাংলালিংক অফিসে গিয়েছিলাম, আমাদের নামের সিমগুলো সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।

এ ঘটনার নগরীর খান জাহান আলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন লাইলি বেগমসহ ভুক্তভোগী পরিবার।

এদিকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি এলাকার রাকিবুল ইসলাম রাকিবের মামা আশরাফুল ইসলাম জানান, রাকিব অনলাইনে ইটালিয়ান সিরামিক বিক্রির একটি পেজে পণ্যের জন্য অর্ডার করে। তার পণ্যটির অর্ডার নিয়ে প্রথমে ৩৪০ টাকা ও পরে ২,৫০০ টাকাসহ দফায় দফায় ৮ হাজার টাকা নেয়। পরে পণ্য না দিয়ে সিম বন্ধ করে রাখে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে সিমের মালিক লাইলি বেগমের পরিচয় পাওয়া যায়।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে, প্রত্যন্ত অঞ্চল ও নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলছে প্রতারকরা। আর এসব সিম ব্যবহার করে অনলাইন প্রতারণা, সাইবার ক্রাইম, অপহরণের মুক্তিপণ আদায়সহ ভয়াবহ অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতারণা এড়াতে সচেতনতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক পুনম চক্রবর্তী বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মে যত ধরনের অপরাধ রয়েছে তার সবই সিমের মাধ্যমে করা সম্ভব। এই ধরনের প্রতারণা খুবই ভয়াবহ। সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

পুলিশ বলছে, অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্য জালিয়াতি করে সিম কিনছেন অপরাধীরা। ফলে অপরাধকাণ্ডে এসব সিম ব্যবহার করেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, অপরাধীরা বিভিন্ন পন্থায় অপরাধ করছে। পুলিশ অপরাধী শনাক্তে কাজ করছে। অপরাধ করে কেউই পার পাবে না। আর এসব প্রতারণা এড়াতে সাধারণ মানুষের আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।