দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমে স্টার্ট ফান্ডের কার্যক্রম প্রশংসনীয়
২০২০ সালের ২০ মে, রাতের পর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন আকষ্মিকভাবে থমকে যায়। সেই রাতে এ অঞ্চলে আঘাত হানে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, যা এ অঞ্চলে আঘাত হানা অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের একটি। এক রাতের মধ্যেই কয়েক লক্ষ মানুষ হয়ে পড়ে গৃহহীন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় বিশ লাখ মানুষ। ৭০ কিলোমিটার বেড়িবাধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় আশাশুনি, শ্যামনগর, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী অনেক গ্রাম। জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ক্ষেতের ফসল, মৎস ঘের, গ্রামীণ অবকাঠামো এমন কি বসবাসের শেষ আশ্রয়টুকুও।
ইতোমধ্যে ঘূর্নিঝড়ের প্রায় ৮ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাসমুহের সম্মিলিত চেষ্টার পরেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। এখনও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, কয়রা উপজেলা সদর, উত্তর বেদকাশিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার চিত্র দেখে মনে হয় না এ অঞ্চলে একসময়ে মানুষ বসবাস করতো।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলের মানুষ প্রায় প্রতি বছর দুর্যোগে আক্রান্ত হয়। তার উপর এ বছরের শুরুতে করোনা ভাইরাস, ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ২১ শে আগস্ট অতি জোয়ার এবং সেই সাথে ২ যুগ পুরানো জলাবদ্ধতা এই এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলোর উপর যেন উপোর্যপরী অভিশাপ হিসেবে নেমে আসছে। এই হতদরিদ্র পরিবারগুলো আর যেন মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না।
কথা হয়, বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া রহিমা বেগমের সাথে। ৪ সন্তানের জননী, ষাটোর্ধ্ব-এ নারীর পরিবারসহ আশ্রয় এখন বাধের উপর অস্থায়ী ঘরে। তার পরিবারে একমাত্র সম্বল ৪ শতক জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে সে এখন ৫ হাত লম্বা ও ৩ তিন হাত প্রসস্থ একটি ঘরের বাসিন্দা। বিগত ৮ মাস ধরে তার ৪ সন্তান কে নিয়ে, ভেড়ির উপরে ৫ হাত লম্বা ৩ হাত প্রসস্থ একটি তাবুতে বসবাস করছে। ২ মাস হলো তার স্বামী চলে গেছে ইটের ভাটায়, পরিবারের জন্য ত্রাণ হিসেবে পাওয়া চাল ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারেনি। টয়লটের প্রয়োজনে সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত রহিমা ও তার মেয়েদের অপেক্ষা করতে হয়। খাওয়ার পানি বলতে একটি নোনা জলের টিউবওয়েল। এতদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও ঘরে না ফিরতে পেরে রহিমা তার ৪ সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা। রহিমার মতো শত শত পরিবারগুলো এখন দিন গুনছে কবে বাঁধ মেরামত হবে, কবে তারা বাড়ি ফিরবে।
ঘূর্নিঝড় ৮মাস অতিক্রম করেছে, এনজিওগুলোর সহায়তাও প্রায় শেষ ঠিক সেই সময় এফসিডিও ও স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উত্তরণ, সহায়, ভূমিজ ফাউন্ডেশন ও কারিতাস বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে রহিমার মত পরিবাগুলোর জন্য বর্ধিত সহায়তা। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের সাইক্লোন বুলবুলের পর থেকে করোনা, আম্ফান এবং জলাবদ্ধতার জন্য এফসিডিও ও স্টার্ট ফান্ড এই অঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য বরাদ্দ করেছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা, যা দ্বারা সহায়তা পেয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার মানুষ।
স্টার্ট ফান্ড এর মূল বিশেষত্ব হলো দুর্যোগের ৭২ ঘন্টার মধ্যেই দুর্যোগ কবলিত এলাকার জন্য প্রকল্প চূড়ান্ত করা এবং ৭ দিনের মধ্যেই তাদের পার্টনার সংস্থার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়া। এখানে জরীপ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় জনগণের উপস্থিতির মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের প্রয়োজন ও মতামতের ভিত্তিতে সহায়তার ধরণ ও উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়। যা দ্বারা স্বল্প সময় ও সীমিত অর্থের মাধ্যমেও দুর্যোগের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জরুরী প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন