ধর্মীয় উৎসবেও পেলাম না স্বাধীনতা
ঈদ মানেই নির্ধারিত সুখ-শান্তি, ঈদ মানেই মুসলিম ধর্মের স্বাধীনভাবে আনন্দ করার দিন। ঈদ মানেই নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ। ঈদ মানেই দুঃখ কষ্ট ভুলে জাতির মিলিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম।
আর সেই ধর্মীয় সুখ ও আনন্দের সময় যদি ২৯টি রোজা হয় তাহলে রাত পোহালেই জলজল করবে ঈদের দিন। আর যদি ৩০টি রোজা হয় তাহলে আগামী পরশু বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের উৎসব কার্যক্রম শুরু হবে।
পূর্ব থেকেই আমাদের কাছে ঈদ মানেই কিন্তু ঘরে থাকা নয়, ঈদ মানেই সুখের বাতাসে হারিয়ে যাওয়া-যে বাতাস কেড়ে নেয়ার ক্ষমতাও কেউ রাখেনা। তাই নির্বিঘ্নে সবাই ঈদ উপলক্ষে ঘুরে বেড়াতে চায় না-এমন মানুষও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মুসলিম ধর্মের ঈদুল ফিতর এমনই এক উৎসব-এদিন গা ভিজিয়ে দিতে সংকোচবোধও করেনা কেউ।
এদিন ঈদের সুখ শান্তি উৎফুল্ল মনের দাবিদার হয় মানুষ। যার যেমন ইচ্ছা তেমনীভাবে ঘুরতে চায় সবাই।
ঈদের দিন ঘুরে বেড়ানোর সাথে সাথে আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে বেড়ানোর প্রচলনটা সবসময়ের মতো হলেও-ঈদের দিনের ঘোরাঘুরির বিষয়টা একটু অন্যরকম লাগে সবারই।
তবে সেটা হতে পারে পায়ে হেঁটে, হতে পারে অটোরিক্সা প্রাইভেটকার কিংবা মোটরসাইকেলে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেল ব্যবহার এমন একপর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যা অধিকাংশ বাড়িতেই মোটরসাইকেল আছে। যার মোটরসাইকেল আছে-সে ঈদের দিন পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরবে।
আত্মীয়ের বাড়ীতে যাবে। এটাই কী স্বাভাবিক নয়? হ্যাঁ, তবে ঈদের দিন মালিকের মোটরসাইকেল আর মোটরসাইকেল থাকে না। কম বেশি সবারই যেনো স্বাভাবিক বিষয় ঘটেছে কিশোর বেলায়। মোটরসাইকেল হোক ভাইয়ের হোক দুলাভাইয়ের হোক মামা চাচা বা খালুর। ঈদের দিন মোটরসাইকেলে ঘুরতে পছন্দ করেনা এমন মানুষও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
সেজন্যই মোটরসাইকেল নিজের হোক বা কোনো অধিকারী আত্মীয় হোক না কেন। ঈদের আবদারে চালাবে গাড়ী। দিতেও বাধ্য সেসকল অধিকারী মানুষগুলো। হ্যাঁ তবে সমস্যা একটা থেকেই যায়। আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি হবে এটা কী স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
কিন্তু দেখা যায়, কিশোর থেকে শুরু করে যুবক আধাবয়স্কসহ অনেকেই মোটরসাইকেলযোগে ঈদ উদযাপন করতে-বাইরে উদ্দেশ্যমূলক অথবা অজানায় ঘোরাঘুরি। তবে এ দিন নতুন পোশাকের গন্ধে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র কাছে থাকবে না এটাও কী স্বাভাবিক নয়। আবার থাকতে হবেই বা কেন?
এ দেশ যখন ৯৫ ভাগ মুসলিম বাস করে-সেদেশে ধর্মীয় উৎসবের স্বাধীনতা যার অন্যতম কারণ অবশ্য উপরেই দেখিয়ে দিয়েছি। তারপরও এই সময় বললে খোলসা হবে সবার। দুলাভাই মামা চাচা খালু ঈদের দাওয়াতে বাড়িতে আসাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সুযোগটাই ওখানেই। কেউ দুলাভাই কেউ মামা-চাচা-খালুর কাছে ঈদের আনন্দে মোটরসাইকেলের চাবি চেয়ে নেবে।
বেরিয়ে পড়বে সড়কের সীমানাজুড়ে। প্রতিদিনের মতো মোটরসাইকেল চেকিং করার যে প্রবণতা সেই আতঙ্কটা থেকেই যাচ্ছে সবার মাঝেই। তাহলে ধর্মীয় স্বাধীনতা কোথায়? অথচ আমরা তো দেখেছি উল্টো চিত্র। অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলার বিরাট নিরাপত্তা দেখতে পাই আমরা।
সে অনুযায়ী মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ধর্মীয় উৎসবে আনন্দকে বাধাগ্রস্থ করতে ঈদের দিনও সড়কে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিং করার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ বিভাগ। দিয়েছেন বেপরোয়া বাইকারদের জরিমানা করার বিধান। যেটা হানড্রেড পার্সেন্ট সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে আমাদের।
কিন্তু প্রতিনিয়ত যেসকল মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়কে-সেসব গাড়ীগুলোই তো চলবে এ জেলাতেই। তারপরও মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিং নির্দেশনা দেয়াটা পুলিশ বিভাগের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করিনা আমরা।
অবশ্য বিগত ঈদগুলোতেও আমরা দেখেছি ঠিকই অন্তত ঈদের প্রথম দিন পুলিশ মোটরসাইকেল চেকিং করে না। যে কারণে একদিনের জন্য হলেও পুলিশের প্রতি ভালো ধারণা তৈরী হতো। অথচ এবার মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশের কঠোরতা কোনোভাবেই সামাজিক হতে পারে না আমাদের মতো সচেতন মানুষ এমনটাই মনে করেছেন।
তবে দুর্ঘটনা এড়াতে শুধুমাত্র বেপরোয়া গাড়ী চালালে শুধু জরিমানায় নয়-একদিনের জন্য জেলেরও ঘানি টানার নির্দেশনা দিলেও সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না পুলিশ বিভাগের।
তবে আগামী ঈদুল আাজহায় যাতে শুধুমাত্র বেপরোয়া বাইকারদের ওপর নির্দেশনা চালু থাকলে-সাধারণ বাইকাররাও ফ্রিভাবে গাড়ীতে ঘুরে ঘুরে ঈদ উৎসব পালন করতে পারবে-এটাই আমাদের কাম্য ছিলো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন