নওগাঁর পত্মীতলায় বঙ্গবন্ধুর সহচর সুরত আলীর শাহাদাতবার্ষিকী পালন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অন্যতম রাজনৈতিক সহচর, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ সুরত আলী দারোগার ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ।
এ উপলক্ষ্যে রবিবার (২২ আগস্ট) সকালে তাঁর জন্মস্থান নওগাঁর পত্মীতলা উপজেলার আমাইর ইউনিয়নের শহীদ সুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উপলক্ষে স্মৃতিচারণ সভা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শহীদ সুরত আলী দারোগা স্মৃতি পরিষদ ও নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ, নওগাঁ যৌথ ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসময় উপজেলার সামাজিক সংগঠন – অদম্য নজিপুর; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নির্মাণাধীন প্রামাণ্য চলচিত্র “নওগাঁ-১৯৭১” এর নির্মাতা সংগঠন – ধ‚মকেতু চলচিত্র পরিষদ এই আয়োজনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে অংশ নেয়। করোনার জন্য এবারে তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী স্বল্প পরিসরে উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ সুরত আলী দারোগার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদেরকে স্মরণ করা হয়।
শহীদ সুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মেহমুদ রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন একুশে পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, ডাসনগর মলংশাহ মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুস সোবহান সরকার, নজিপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রেজা চৌধুরী, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি ওমর ফারুক, ধ‚মকেতু চলচিত্র পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচিত্র নওগাঁ ১৯৭১’র পরিচালক নাসরুল্লাহ রাসু প্রমুখ। বিদ্যালয়টির শিক্ষক, ছাত্র- ছাত্রীসহ স্থানীয়রা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
১৮৯৩ সালে বর্তমান নওগাঁ জেলার পত্মীতলা উপজেলার ডাশনগর গ্রামে এক সমভ্রান্ত পরিবারে জন্মেছিলেন সুরত আলী। গ্রামের পাশে পাঠশালায় প্রাথমিক স্কুলে পড়া লেখা শেষ করে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হোন। সেখান থেকেই ১৯০৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯১২ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পড়ালেখা শেষে পুলিশে যোগ দেন সুরত আলী। চাকরি জীবনে বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপ-পরিদর্শক পদে চাকরি করেছেন তিনি।
১৯৫০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগে যোগ দেন তিনি। পরে তিনি ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন।
একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠকের ভূমিকা পালন করায় একাত্তরের ১৫ আগষ্ট স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় বাড়িতে হামলা করে সুরত আলী দারোগাকে ধরে নিয়ে যায় পাকসেনারা। ডাশনগর গ্রামে সুবিশাল মাটির তৈরী তাঁর বাড়িটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। মহাদেবপুর পাকসেনা ক্যাম্পে কয়েকদিন অমানুষিক নির্যাতনের পর ২২ আগস্ট তাকে হত্যা করে পাক বাহিনী। পরে তাঁর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় আত্রাই নদীতে। তাঁর লাশের সন্ধান পাননি স্বজনরা।
১৯১৪ সালে স্থাপিত স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে পরে পরিবারবর্গ এবং স্থানীয়দের চেষ্টায় ১৯১৮ সালে এসে মুক্তিযুদ্ধের এই অকুতোভয় সংগঠকের নামে নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর একসময়ের এই অন্যতম সহচরকে অনতিবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা দেয়া হোক এবং তাঁর স্মৃতির রক্ষার্থে সরকার যেন বিশেষ ভূমিকা রাখে – এখন এমনটাই দাবি পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং স্থানীয়দের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন