নওগাঁয়ে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি পিলার, ছয় বছরেও হয়নি ব্রিজ

নওগাঁর রাণীনগরের সর্বরামপুর-ভবানীপুর চৌতাপাড়া নামক স্থানে রতনডারি খালের মাঝখানে প্রায় ছয় বছর যাবত দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের দুটি পিলার। বরাদ্দের প্রায় ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি ব্রিজের এ দুটি পিলার দূর থেকে দেখলে মনে হবে খাম্বা ছাড়া আর কিছুই নয়। দীর্ঘ ছয় বছরে ধরে এভাবেই দুটি পিলার দাঁড়িয়ে থাকলেও আজও ওই স্থানে ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।

খালের মধ্যে ব্রিজটি না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে পার হতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে ওপারে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে করে চড়ম দুর্ভোগে রয়েছেন এলাকার ১০ গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ কৃষিনির্ভর প্রায় সাত হাজার পরিবার। এলাকাবাসীর উন্নয়ন ও দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি স্থানীয়দের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে উপজেলার রতনডারি খালের সর্বরামপুর-ভবানীপুর চৌতাপাড়া নামক স্থানে ফুট ব্রিজ নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) থেকে প্রায় ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বছরের মার্চ মাসে ব্রিজটি নির্মাণে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে এলজিইডি। কাজটির ঠিকাদারী দায়িত্ব পেয়েছিলেন নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ মহল্লার গোলাম কিবরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধায়নে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও রহস্যজনক কারণে কাজটি সমাপ্ত না করে সেখানে শুধুমাত্র দুটি পিলার নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর এস্টিমেটসহ দরপত্র বিবরণীর ফাইলটিও উপজেলা পরিষদ থেকে এক সময় গায়েব হয়ে যায়। আবার বরাদ্দের পুরো টাকায় শুধু দুটি পিলার তৈরি করে ব্রিজের কাজ শেষ না করলেও ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর চলতি বছরে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) থেকে ব্রিজটির আরো দুইটি পিলার নির্মাণের জন্য আবারও প্রায় ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রতনডারি খালের উত্তর পাড়ে কাশিমপুর ইউনিয়নের সর্বরামপুর গ্রাম এবং দক্ষিণপাড়ে গোনা ইউনিয়নের ভবানিপুর গ্রাম। দীর্ঘদিন থেকে সর্বরামপুর-ভবানীপুর চৌতাপাড়া নামক স্থানে কোনো ব্রিজ না থাকায় গোনা ইউনিয়নের ভবানিপুর, বেতগাড়ি, বয়না, হঠাৎপাড়া ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম এবং উত্তর পার কাশিমপুর ইউনিয়নের সর্বরামপুর, কাশিমপুর, এনায়েতপুর ও কুজাইল গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলসহ সাত হাজার কৃষক পরিবারের কৃষি পণ্য পরিবহণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

চৈত্র থেকে আষাড় মাস পর্যন্ত রতনডারি খালে পানি থাকে না। এ সময় নির্মাণাধীন ফুট ব্রিজের নিচ দিয়ে পায়ে হেঁটে দু’পাড়ের মানুষ চলাচলা করে। তবে বর্ষা মৌসুমে নৌকায় একমাত্র ভরসা হলেও সেটিও সবসময় থাকে না। খালের দক্ষিণ পার ভবানীপুর গ্রাম থেকে খালের উত্তর পার সর্বরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পায়ে হেঁটে প্রায় আট মিনিটের পথ। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কুজাইল গ্রাম হয়ে স্কুলে ঘুরে আসতে হয়। আর খুবই জরুরি হলে সাঁতার কেটে পার হয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।

স্থানীয় কৃষক তোফাজ্জল হোসেন, মজিদ, খালেকসহ অনেকেই জানান, গ্রামের মাঠে আমাদের জমি-জমা আছে। বর্ষা মৌসুমে ওইসব জমি থেকে খাল পেরিয়ে ফসল ঘরে আনতে গেলে পানিতে ভিজে যায়। পরিবহণ যোগে ফসল ঘরে আনতে গেলে লাভতো দূরের কথা লোকসানের মুখে পড়তে হয়। দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রত্যাশিত ব্রিজটি আজও নির্মাণ না হওয়ায় যাতায়াতসহ সর্বক্ষেত্রে ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান, রাশেদুজ্জামানসহ আরও অনেকেই বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে সর্বরামপুর ফুট ব্রিজের দুইটি পিলার তৈরি করে রেখে গেছে। এরপর আর কেউই এদিকে মুখ ফিরে দেখেনি। দীর্ঘদিন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ব্রিজের আংশিক অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ওপারে যেতে হলে সব সময় নৌকাও পাওয়া যায় না। তখন সাঁতরে ওপারে যেতে হয়, তা না হলে প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। এতো দূরের পথ পেরিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় হয়। এই ব্রিজ না থাকায় আমাদের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এভাবে ঝুঁলে আছে। দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা

এদিকে ব্রিজটি নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে একার্ধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু বলেন, সর্বরামপুর ফুট ব্রিজটি নির্মাণ হলে খালের দু’পাড়ের বাসিন্দারের জীবনযাত্রায় আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তবে ওই ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্নের জন্য যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন তা উপজেলা পরিষদ থেকে একবারে দেওয়া সম্ভব নয়। তারপরে চলতি বছরে আবারও (এডিপি) থেকে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ছয় বছর আগে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। তবে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কাজটি পিছিয়ে পড়ে। চলতি বছরে এডিপি থেকে কিছু টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি অল্প কিছু দিনে মধ্যেই আবার নির্মাণ কাজ শুরু হবে।