নুসরাত গেলো, এরপর কে?
এদেশে লম্পট অধ্যক্ষের পক্ষে মিছিল বের হয়, আদালতে অপরাধীদের পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের নেতা আইনজীবী হয়, বিচার চাইলে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হয়, প্রতিবাদ করলে ধর্ষণ-খুনের শিকার হতে হয়, আর চুপ থাকলে নিজেকে দু’পায়ী জন্তু মনে হয়।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে হেরে গেল মেয়েটি, চলে গেল এই পৃথিবী ছেড়ে গতরাতে (বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯)।
ফেনীর নুসরাত গেলো, এবার আরেক নুসরাতের চলে যাওয়ার অপেক্ষা। এভাবে একদিন চলে যাবে শত শত প্রতিবাদী ও সম্ভাবনাময়ী প্রদীপগুলো। একদিন হয়তো ভরে যাবে ক্যালেন্ডারের সব পাতা। তখন হয়তো পুরো বছরজুড়েই মানুষ ধর্ষণ-হত্যার বিচার চাইতে থাকবে।
একটু পেছন ফিরে তাকায়। কুমিল্লার কলেজছাত্রী সুহাগী জাহান তনু, চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুলছাত্রী কণিকা ঘোষ, ঢাকার সুরাইয়া আক্তার রিসা ও মাদারীপুরের নিতু মন্ডল, সিলেটের মৃত্যুঞ্জয়ী খাদিজা, এবার ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। এভাবে দীর্ঘ হচ্ছে জাতির অভিশাপের পাল্লা। এর বাহিরেও রয়েছে অজস্র ঘটনা।
তনু, প্রিয়া, নিতু, রিসা, কণিকা, ও নুসরাতের পর এবার হয়তো আপনার বোন বা মেয়ের পালা। যেদিন আপনার মেয়ে বা বোনকে হারাবেন, সেদিন বুঝবেন নুসরাতের ভাই ও বাবার কষ্টটা। আমি-আপনি নুসরাতের কেউ নই। কেউ যদি হতাম সেদিনই প্রতিবাদ করতাম, শরীরে হাত দেওয়ার অপরাধের বিচার চাইতে যেদিন নুসরাত-নুসরাতের মা পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। আমরা কেউ সেদিন নুসরাতের পরিবারের পাশে দাঁড়াইনি।
নুসরাতের মৃত্যুর দায় আমরাও কিন্তু এড়াতে পারি না। পূর্বের নৃশংস ঘটনারগুলোর বিচার কি আমরা আজও পেয়েছি? অপরাধীরা কেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে? আর যদিও অপরাধীরা ধরা পড়ে কিন্তু আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখি না। যদি কিছু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হতো তাহলে হয়তো নুসরাতকে আমরা হারাতাম না।
নুসরাত যখন নিজের জায়গা থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছিল, মাকে নিয়ে যখন থানায় গিয়েছিল, তখন কোথায় ছিলাম আমরা? নুসরাত মরেছে আর এখন আমরা চিল্লাইতেছি- ‘বিচার চাই, বিচার চাই’। কার বিচার চান আপনি? আগে নিজের বিচারটা করুন।
কলেজছাত্রী তনু যখন মরেছিল তখনও এমন চিল্লাইছিলাম আমরা। দু’দিন পরে ঠিকই সবাই চুপ। এভাবে চুপ থাকি ততদিন, যতদিন পর্যন্ত আরেক তনু বা নুসরাত না মরতেছে!
গত ৮ এপ্রিলের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চলন্ত বাসে এক স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের চেষ্টা করে বাসের চালক ও হেলপার। বাসটি মহাসড়কের শিমরাইল ইউটার্ন (ডাচ্-বাংলা ব্যাংক) এলাকায় পৌঁছালে সব যাত্রী নেমে যায়। পরে বাসটি চলা শুরু করলে ওই ছাত্রী শিমরাইল মোড়ের ফুটওভার ব্রিজে নামার কথা বলে হেলপারকে।
কিন্তু ছাত্রীকে না নামিয়ে বাসটি চলতে থাকে। এ সময় ছাত্রী নামতে চাইলে বাসের হেলপার সোলেমান জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ছাত্রী চিৎকার করলে গলা টিপে ধরে বাসের ভেতর নিয়ে যায় সোলেমান।
পরে চালক ও হেলপার বাস চালিয়ে কাঁচপুর সেতুর নিচে নিয়ে গেলে ওই ছাত্রী চিৎকার দেয়। তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে এবং তাকে উদ্ধার করে।
গণপরিবহনে গণধর্ষণ চেষ্টার এই ঘটনা সেদিন কিছু পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটি নিয়ে কারও চিল্লাচিল্লি করতে দেখা যায়নি। মেয়েটি ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে গিয়েছে বা রক্ষা পেয়েছে। আর এজন্যই বোধ হয় এটা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু মেয়েটি যদি নির্মম ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাতো, অত:পর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতো তাহলে হয়তো একটু আমাদের টনক নড়তো। যেমনটা নড়েছে নুসরাতের বেলায়।
অপরাধ করা আর নীরবে চেয়ে দেখা দুটোই অপরাধ। আমরা আর কোনো নুসরাতকে হারাতে চাইনা। এখনই সময় গর্জে ওঠার। তাই আসুন আমরা গর্জে উঠি আর সেই সাথে নুসরাতদের মিশনের হাল ধরি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন