পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়
পায়ে তালাবদ্ধ শিকল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গৃহবধু!
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্যাতন সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোজেঁ বেড়িয়েছেন এক গৃহবধু। সোমবার কাকডাকা ভোরে কলাপাড়া পৌরশহরের ব্রাক সহায়তা কেন্দ্রে ওই গৃহবধু পায়ে লোহার শিকলসহ তালাবদ্ধ অবস্থায় এসে পৌঁছালে উপস্থিত সবাই থমকে যান।
ওই নারীর মুখ মন্ডল, মাথা ও সাড়া শরীরে নির্যাতনের চিহ্নই যেন জানান দিচ্ছিলো কতটা প্রহার সহ্য করেছেন তিনি। এর পরেই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চেয়ে অশ্রুঝড়া বিলাপের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন তার উপরে বয়ে চলা নির্মম নির্যাতনের চিত্র।
মোসা. মাজেদা বেগম (৫৫) উপজেলার মহিপুর থানার সদর ইউপির বিপিনপুর গ্রামের নূর-ইসলাম হাওলাদারের স্ত্রী। তিনি ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ মোট ৫ সন্তানের জননী।
তার অভিযোগ, দীর্ঘবছর যাবৎ তার স্বামী তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারী নির্যাতন সইতে না পেরে ব্রাক সহায়তা কেন্দ্রে এসে অভিযোগ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হন তার ব্যবসায়ী স্বামী।
তিনি বলেন, তার স্বামী অভিযোগের কথা জানতে পেরে গত ১৫ দিন ধরে মোটা লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছেন ঘরের একটি খুটির সাথে। সোমবার ভোররাতে তিনি কৌশলে খুঁটির অংশের শিকল খুলে পায়ে হেটে সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছান। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমাকে পাগল বলে, আমার সাথে কেউ ভালো আচারণ করেনা, কথায় কথায় সবাই মারধর করে। এমনকি আমার একমাত্র পুত্র সেও আমার গায়ে হাত তোলে। কেউ আমাকে বুজতে চায়না। হাত পা বেঁধে আমাকে মগ দিয়ে ঢেলে ওষুধ পান করায়। এতে প্রায় সময়ই আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি বলেন আমি আমার স্বামীর কাছে থাকতে চাই। কিন্ত তিনি আমাকে আমার বাবার বাড়িতে একা ফেলে আসেন। প্রায় সময়ই আমাকে একা সময় কাটাতে হয়, এর থেকে আমার মৃত্যু অনেক ভালো।
কলাপাড়া ব্রাক সহায়তা ক্রেন্দ্রের এস্যোসিয়েট অফিসার রিপন বিশ্বাস বলেন, এই নারীর সর্বাঙ্গে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে অভিযোগ করার ফলে ওনার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। যতটুকু দেখেছি তার সামান্য মানুসিক সমস্যা রয়েছে। তবে তা সহনশীল পর্যায়ে। আমরা তাকে মহিপুর পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেছি। পরবর্তী ব্যবস্থা আমরা গ্রহন করবো।
বিপিনপুর ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বর সেলিম হাওলাদার জানান, নুর-ইসলাম এর স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে জানি, কিন্তু নির্যাতন করা হচ্ছে তা জানা নেই।
অভিযুক্ত স্বামী নুর-ইসলামের সাথে এরকাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
মহিপুর থানার ওসি খন্দকার আবুল খায়ের জানান, ওই নারীকে তার পরিবারের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠানো হয়েছে। তিনি সুস্থ হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন