ফোন চুরির অভিযোগে নাকে খত, আড়াই লাখ টাকা জরিমানা!
নড়াইল : একটি মোবাইল চুরির অভিযোগে নড়াইলে শিপন নামের এক যুবককে উঠানে ১৫ গজ জায়গায় নাকে খত দেওয়ানো হয়েছে। শুধু তা করেই ক্ষান্ত হয়নি; মারধর এবং আড়াই লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। আর জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে বাড়িঘর বিক্রি করে টাকা আদায়, অন্যথায় গ্রামছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়।
গত শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের রুখালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে দুটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও গ্রাম্য মাতব্বরেরা নিজেরাই বিচারের দায়িত্ব পালন করেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গতকাল রোববার গভীর রাতে পাঁচজনকে আটক করেছে।
এলাকাবাসী জানান, গ্রাম্য মাতব্বর শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, গামা বিশ্বাস, বিশ্ব বিশ্বাস, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস ও সুবুদ্ধি মজুমদার এ বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এ সময় বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তির ভাষ্য, গত বুধবার রাতে বিছালী ইউপি ভবনের সামনে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখানো হচ্ছিল। এ সময় ইউপি ভবনের পেছনে শৈলেন্দ্রনাথ সিকদারের বাড়ি থেকে একটি সাধারণ ফোনসহ ১ হাজার ৮০০ ভারতীয় রুপি চুরি হয়। একই গ্রামের শিপন রায় এ চুরি করেছেন—এমন অভিযোগে শনিবার বিকেলে শৈলেন্দ্রনাথ সিকদারের বাড়িতে সালিসি বৈঠক বসে। গ্রাম্য মাতব্বর গামা বিশ্বাস, বিশ্ব বিশ্বাস, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, সুবুদ্ধি মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন শিপনকে দোষী সাব্যস্ত করে বাড়ির উঠানে তাঁকে দিয়ে ১৫ গজ নাকে খত দেওয়ান। তাঁকে চড়-লাথি মারা হয়। এ ছাড়া আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে বাড়ি থেকে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি, বাড়ি-ঘর বিক্রি করে টাকা আদায় করা হবে; অন্যথায় গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
শিপনের বাবা নেই। তিনি কৃষিকাজ করেন। আর্থিকভাবে তাঁর পরিবার সচ্ছল। তাঁর নিজের মোটরসাইকেল রয়েছে। তিনি গ্রাম্য রাজনীতির শিকার বলে কয়েকজন ধারণা করছেন।
ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা শুনে সালিসি বৈঠকে উপস্থিত হই। বিষয়টি ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে জানাতে বা শিপনকে পুলিশের কাছে তুলে দিতে গ্রাম্য মাতব্বরদের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাঁরা আমার কথা শোনেননি। তাঁরা আমাকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলেন। আমি চলে আসি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শৈলেন্দ্রনাথ সিকদারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গতকাল রাতে আটক করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন