বাসে পিষ্ট : সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল পিতৃহারা রাজুর

বিমানবন্দর সড়কের বাস চাপায় প্রাণহারানো রেজাউল করিমের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হবেন। ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতেন তিনি।

পড়াশোনার পাশাপাশি গান গাইতেন রাজু। তার গলায় মোহিত পরিচিতজন সবাই। ইউটিউবে তার একটি গানের চ্যানেলও রয়েছে।

এসব তথ্য জানিয়েছে রাজুর খালাতো ভাই মেহজাব উদ্দিন। বলেছেন, এখন একটাই চাওয়া। যার কারণে রাজু মারা গেছেন, তার যেন বিচার হয়।

‘আমাদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা ভেঙে গেল এক দুর্ঘটনায়। আমি ভাই হারিয়েছি কিন্তু ওকে যারা মেরেছে তাদের যেন বিচার হয়।’

রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল রেডিসনের সামনে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। সে সময় জাবালে নূর (ঢাকা মেট্রো ব-১১৯২৯৭) পরিবহনের একটি বাস বেশ কয়েকজনকে চাপা দেয়।

পরে স্থানীয়রা কুর্মিটোলা হাসপাতালে আহতদের নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রেজাউল করিম রাজু করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থী। তারা জাবালে নূর বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং শতাধিকের বেশি বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

রাজুর ভাই মেহজাব উদ্দিন বলেন, ‘রাজু যখন ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা করত তখন ওর বাবা মারা যায়। পরে সে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আমাদের ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকার আশকোনা বাজারের পাশের বাড়িতে চলে আসে।’

‘এখানে থেকেই পড়াশোনা করত সে। খালা (রাজুর মা) গ্রামেই থাকেন। আপন ছোট ভাইয়ের মতো ওর সাথে সর্ম্পক ছিল আমাদের। সে প্রায় আমার কসমেটিকস-এর দোকানে বসত।’

‘এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে রাজু সিজিপিএ ৪.৫ পেয়েছিল। লম্বা চওড়া ছিল বলে সব সময় বলত সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে। আর ছাত্র হিসেবেও খুব ভালো ছিল।’

“ওর দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। আমি ওকে খুব দেখভাল করতাম। পড়াশোনা নিয়ে খুব টাইটে রাখতাম। গতকাল রাতেও দুই ভাই এক সাথে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ম্যাচ দেখে শুতে গিয়েছিলাম। রাতে সর্বশেষ কথা হয়েছিল ‘তোর কলেজ আছে ঘুমাতে যা’-বলতে বলতে গলা ধরে আসে রাজুর ভাইয়ের।

‘সকালে সাড়ে সাতটার দিকে ওর ভাবি নাস্তা তৈরি করে দিয়েছিল, দেখলাম খেয়ে কলেজের জন্য বের হল। তখন আর কোন কথা হয়নি। কিন্তু কে জানে আজ ওর লাশ নিতে হাসপাতালে বসে থাকতে হবে!’

খেলাধূলার চেয়ে গানের প্রতি রাজুর ঝোঁক ছিল জানিয়ে তার খালাতো ভাই বলেন, ‘গান খুব ভালোবাসত। পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধু মিলে গান লিখে তা গাইত। ওর একটা ইউটিউবে গানের চ্যানেলও ছিল।’