বিএনপির ‘ভীতি ও জালিয়াতির কৌশল’ সম্পর্কে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সতর্ক করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আপনারা ইতিমধ্যে বিএনপি কর্মীদের নিরপরাধ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সহিংসতার বিষয়ে জেনেছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সহানুভূতি পাওয়ার জন্য বিএনপি প্রায়ই কূটনৈতিক মিশন ও আমাদের বিদেশি বন্ধুদের বিভ্রান্ত করতে ‘ভিক্টিম’ হওয়ার ভাণ করে থাকে।’রাজপথের অতীত সহিংসতার পটভূমিতে সহানুভূতি অর্জনের উদ্দেশ্যে কূটনীতিকদের বিভ্রান্ত করতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ‘ভীতি ও জালিয়াতির কৌশল’ সম্পর্কে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সতর্ক করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘(তবে) আমরা সংবিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অটল থাকার এবং যথাসময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সরকারের দৃঢ় ও অটুট অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি।’
মোমেন বলেন, বিরোধীরা সাধারণ মানুষকে ‘বিপথগামী’ করারও চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ‘আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন কথিত ‘উপদেষ্টা’কে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দেখেছি। পরে দেখা গেছে যে ওই ব্যক্তি একজন ‘প্রতারক’।’
তিনি বলেন, বিএনপির ভীতি ও জালিয়াতির কৌশল আগেও কাজে আসেনি, এখনও আসবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারসহ প্রায় ৫০ জন কূটনীতিক সংক্ষিপ্ত নোটিশে ডাকা এ ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনসুল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এসময় মোমেনের সঙ্গে ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর ও এর পরের দিন যা ঘটেছে তাতে সরকার মর্মাহত হলেও ‘অতীতে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াবহ সহিংসতার অভিজ্ঞতার কারণে বিস্মিত হয়নি’।
মন্ত্রিসভার একাধিক সহকর্মী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মন্ত্রী বলেন, ‘(কিন্তু) আমার একমাত্র আফসোস হলো যে তারা খুব একটা বদলায়নি।’
মোমেন কূটনীতিকদের বলেন, ‘বিএনপি ও তার মিত্রদের সহিংসতা ও আগ্রাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে বিশেষ করে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় বিএনপি ও তার উগ্র ডানপন্থী মিত্র জামায়াতে ইসলামী সহিংসতা ও ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছিল।’
নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা ও মারাত্মক নির্যাতন করেছে এবং নারীদের গণধর্ষণ করেছে।তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন ‘ব্যাপক সহিংসতা ও ভোট কারচুপির অভিযোগে কলুষিত হয়।
আবার ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেও বিএনপি ও তার সহযোগীরা পেট্রোল বোমা ব্যবহার করে কয়েক হাজার গাড়ি ভাংচুর বা অগ্নিসংযোগ করেছে। অনেক সময় ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।
মোমেন বলেন, ওই সময় তাদের পেট্রোল বোমা ও হ্যান্ড গ্রেনেড হামলায় আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ২০ সদস্যসহ ৪০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয় এবং আহতদের মধ্যে অনেকেই ‘ভয়াবহ ক্ষত ও আঘাত নিয়ে বেঁচে আছেন’।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিএনপি কর্মীদের পরিচালিত ব্যাপক সহিংসতার সংক্ষিপ্তসার প্রেরণ করেছি।’
মোমেন আশা করেন যে বিদেশি কূটনীতিকরা টিভি ও অনলাইন ফুটেজে কীভাবে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা কীভাবে একটি পাবলিক বাসে আগুন দিয়ে গণপরিবহন শ্রমিকের মূল্যবান জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা দেখতে পেয়েছেন।
‘আমি বিশ্বাস করি যে আপনারা ২০১৩-১৪-১৫ এবং এখনকার পরিস্থিতির মধ্যে সম্পূর্ণ মিল লক্ষ্য করেছেন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এবার তাদের লক্ষ্য ছিল পুলিশ ও বিচার বিভাগ।’
তিনি বলেন, একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা ছাড়াও বিরোধী দলের কর্মীরা প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারকদের বাসভবনে হামলা চালায়, ছয়টি পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ৬৫ জন পুলিশ সদস্যকে আহত হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘এমনকি তারা পুলিশ হাসপাতাল চত্বরে এবং অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছে যার ফলে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়।’
তিনি বলেন, বিএনপি দায়িত্বরত সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদেরও রেহাই দেয়নি। বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (বিএফইউজে)’ব তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি কর্মীরা অন্তত ২৫ জন গণমাধ্যমকর্মীকে আক্রমণ করে গুরুতর আহত করেছে।
মোমেন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে তাদের লাঠি-সোঁটা, লোহার রড ইত্যাদি সংগ্রহ করতে এবং বিক্ষোভের দিন ব্যবহারের জন্য লুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে।’
মন্ত্রী বলেন, কূটনীতিকরা হয়তো ইতিমধ্যেই জানেন যে বিএনপি আগামীকাল থেকে তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে। এসময় ‘আমরা নিরপরাধ বেসামরিকদের জীবন ও সম্পত্তির ওপর আরও বেশি আক্রমণ হবে বলে আশঙ্কা করছি।’
মোমেন বলেন, ‘তবে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে প্রতিটি মানুষের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ- আমাদের বিএনপি’র বন্ধুরা সেটা বুঝুন বা না বুঝুন।’
মন্ত্রী বলেন, সরকার ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করবে’ তবে ‘আমাদের ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার বা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টাকে নস্যাত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুগুলোও আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান করতে এবং জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনি পরিসীমার মধ্যে তাদের এখতিয়ার অনুযায়ী সবকিছু করবে।’
মন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা ইস্যু ছাড়াও ধর্মঘট ও অবরোধের অর্থনৈতিক দিক সম্পর্কে দূতদের অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য মতে, বিএনপির হরতাল-অবরোধে সারাদেশে মোট ১,৬০০ কোটি টাকা (বা ১৯২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা প্রতিদিন জিডিপির ০.২ শতাংশ ক্ষতি হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন