বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট থেকে রক্ষা পেতে একসঙ্গে কাজ করুন : প্রধানমন্ত্রী
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2022/10/png_20221017_152058_0000-900x450.png)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকট থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি প্রতিটি জমিকে চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রনালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সকলকে আবারো অনুরোধ করছি কোন খাদ্যের অপচয় করা যাবে না। যার যেখানে যতটুকু পরিমান জমি আছে তা চাষের আওতায় নিয়ে এসে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সারাবিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য-এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যা আমাদের দেশের মানুষ কেবল নয়, সারাবিশ্বের মানুষেরই এটা একান্তভাবে প্রয়োজন।
খাদ্যের চাহিদা কোনদিন কমে না, বরং বাড়ে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই আমি যত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি আর যত বেশি খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারি ততই আমাদের মঙ্গল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং যেটা আমাদের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখতে পারে।’
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বলবো সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, খাদ্যের অপচয় বন্ধ করা এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য সংরক্ষণ এবং পুর্নব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া সারাদেশে গড়ে তোলা ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে ওঠে সেই বিষয়টাতেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরোও বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অর্জনে ৬টি থিম্যাটিক এরিয়াতে কাজ করে যাচ্ছি। প্রথমত, কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়ন; দ্বিতীয়ত, কৃষি উপকরণ সরবরাহ; তৃতীয়ত, কৃষি সম্প্রসারণ; চতুর্থত, সেচ কাজে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার; পঞ্চমত, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং ৬ষ্ঠত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানব সম্পদ উন্নয়ন। এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান তৈরী করেছে এবং ২০১৮ সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য দিবস পালন শুরু করেছে।
পাশাপশি তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে ‘অন দ্যা স্পট স্ক্রিনিং,’ ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে মানুষ নিরাপদ খাদ্য পেতে পারে। আর এই নিরাপদ খাদ্যটাই হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষের প্রধান কার্যালয় স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় ল্যাবরেটরী স্থাপনে পূনর্বাঞ্চলে ৫ একর জমিও বরাদ্দ করেছে। আটটি বিভাগে আটটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরী স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষের হটলাইন চালু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ নীতি- ২০২০’ আমরা প্রণয়ন করেছি এবং এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। যাতে নিরাপদ খাদ্যটা আমরা মানুষকে দিতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এগুলো করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা কৃষিবিদ তাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কেননা আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাদের বিরাট অবদান রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কৃষকদেরও আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, যেহেতু আজকে তারা আমাদের এই খাদ্যের জোগানটা দিচ্ছে। কাজেই তাদের সম্মান ও সহযোগিতা করাটা একান্তভাবেই অপরিহার্য্য।’
প্রবাসে কর্মরতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের যারা আজকে বিদেশে চাকরী বা কাজ করেন বা উপার্জন করেন, তারা নিজের দেশ, গ্রাম ও মাটিকে ভুলে যাবেন না। নিজের যদি কোন পতিত জমি থাকে সেটাকেও চাষের আওতায় নিয়ে আসুন। তাহলে দেখবেন আমাদের দেশ কখনো পিছিয়ে থাকবেনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সবধরনের ভর্তুকি দিয়েই কৃষি ব্যবস্থাকে সচল রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কেননা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবহন এবং খাদ্য প্রাপ্তির যে সমস্যা বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে- এই সমস্যা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে হবে। কারণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোই আজকে বলছে বিশ্বে খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কাজেই আমাদের বাংলাদেশে যেন কোনরকম খাদ্যাভাব দেখা না দেয়, তারজন্য এখন থেকেই সকলকে সচেতন হতে হবে। যার যতটুকু সামর্থ আছে, জমি আছে, সবাই সেখানে কিছু না কিছু উৎপাদন করেন। যে যেভাবে পারেন নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে সকলেই একটু মনযোগী হন, সাশ্রয়ী হন।
পতিত জমি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসবে না, বরং বিশ্ব খাদ্যসংকটে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশকে খাদ্য সহায়তা করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এজন্য তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোন দুর্যোগে আমাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আমরা যেন জমানো খাদ্যটা ভালো ভাবে ব্যবহার করতে পারি, সেদিকে আমাদের সকলকে নজর দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে সমস্ত পণ্য এখনো আমাদের আমদানী করতে হয়, যেমন- ভোজ্য তেল অথবা ভূট্টা, গম ইত্যাদি উৎপাদনেও তিনি মনযোগী হওয়ার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বারোপ করে উদাহারণ দেন ইতোমধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনের মাধ্যমে সে সংকটকে আমরা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের যে মাটি ও মানুষের শক্তি রয়েছে তা নিয়ে আমাদের কৃষকদের একটু সহায়তা দিলেই আমরা ভোজ্যতেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো। আর তাঁর সরকার মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ করে দেয়া দেয়া এক ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন