বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে পলিথিনের নৌকা!
প্রতিকূল পরিবেশ, শ্রমিক সংকট, কৃষক-সেচযন্ত্র মালিকের মধ্যে উৎপাদিত ধানের ভাগ বন্টন নিয়ে বিরোধ ও আগাম বন্যার আশংকার মধ্য দিয়ে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলছেন পাবনার চাটমোহরের কৃষকেরা। উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করণ খরচ বেশি হওয়ায় ধানের ভাল দাম থাকলেও কৃষক খুব একটা লাভবান হচ্ছেন না।
ইতিমধ্যে উপজেলার নিচু এলাকার বেশির ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। গত তিন দিন যাবত অত্যাধিক পানি বৃদ্ধির কারণে বিলের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তা শেষ নেই কৃষকের। এদিকে চরমভাবে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় ক্ষেতে পাকা ধান থাকলেও শ্রমিকের অভাবে তা কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। উঁচু এলাকার কৃষকেরা বিভিন্ন যানবাহনে ধান পরিবহণ করলেও নিচু এলাকার অনেক কৃষক পলিথিন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে নৌকা তৈরী করে তাতে ধান পরিবহণ করছেন।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো চাষ মৌসুমে চাটমোহরের ১১ টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জন হয়েছে ৯ হাজার ৬১০ হেক্টর। এ এলাকায় সাধারণত ব্রীধান-২৮, ২৯, ৫০. ৫৮, ৬৪, ৮১, ৮৪, ৮৯, ৯২, ৯৬ জাতের ধান চাষ হয়। এছাড়া হাইব্রিড এসএল ৮ এইচ, তেজ গোল্ড, দোয়েল, টিয়া ও ব্রাক জাতের বোরো ধান চাষ হয়ে থাকে।
উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিন নামক বোরো চাষী জানান, দীর্ঘ দিন যাবত বোরো ধানের চাষ করে আসছেন তিনি। চারা উৎপাদন, জমি প্রস্তুত, মই দিয়ে জমি সমান করা, চারা রোপণ, সার, কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার এবং কাটা বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষে প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়। ধান ভাল হলে ২০ থেকে ২৫ মন হারে ফলন পাওয়া যায়।
তবে যারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষ করেন তাদের প্রতিবিঘায় অতিরিক্ত আরো ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। সেচ যন্ত্র মালিককে উৎপাদিত ধানের চার ভাগের এক ভাগ দিতে হয়। সব মিলিয়ে খুব একটা লাভ থাকেনা।
নটাবাড়িয়া গ্রামের বোরো ধান চাষী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ধানের ভাল দাম থাকা সত্ত্বেও আবাদে খরচ বেশি হওয়ায় লাভ থাকছে না। বিলে পানি প্রবেশ করায় ধান পরিবহনেও সমস্যা হচ্ছে। নৌকার সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে পলিথিন দিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে নৌকা আকারের বাহন তৈরী করে ধান বহন করছি আমরা। এতে ঝুঁকি থাকলেও খরচ কম।
বোয়াইলমারী গ্রামের বোরো চাষী আব্দুল গফুর জানান, ইতিমধ্যেই বিলে বর্ষার পানি প্রবেশ করেছে। কয়েক দিন আগে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। এখনো প্রায়শই বৃষ্টি হচ্ছে। জমি থেকে ধান কেটে মাথায় বা গাড়িতে করে বাড়ি নিতে পারছি না। নৌকার ও বেশ সংকট। তাই পলিথিন দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় নৌকা তৈরী করে জমি থেকে ধান পাকা সড়কে নিয়ে এসে অন্য গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে যেতে হচ্ছে। যে ভাবে পানি বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে অনেক জমির ধান ডুবে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
পলিথিন দিয়ে একটি নৌকা তৈরী করতে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হয় বলেও জানান তিনি। উপজেলা হাসুপুর গ্রামের বোরো চাষী ইয়ার মাহমুদ জানান একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৮০০ টাকা দিতে হয়। তারপরও ঠিক মত শ্রমিক পাওয়া যায়না।
উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অধিকাংশ এলাকায় সেচ বাবদ সেচ যন্ত্রের মালিকরা চার ভাগের এক ভাগ ধান নিচ্ছেন। কোন কোন এলাকায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ ধান নিচ্ছেন সেচ যন্ত্রের মালিকরা। এ নিয়ে চাষী ও সেচ যন্ত্র মালিকের মধ্যে বিরোধ ও চলমান রয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, ইতিমধ্যেই চলতি মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১০ হেক্টর জমিতে বেশি বোরো চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৬.৫ থেকে ৭.৪ টন। শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলে কৃষককে তা কেটে ফেলার জন্য বলা হচ্ছে। ধানের দাম ভাল থাকায় বর্তমান সময়ে বোরো ধানের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন