যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের ফল পেতে দেরি কেন?

নির্বাচন তো হল, তাহলে কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট?

আসলে আমরা এখনও জানি না। ডনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন- কাউকে নিশ্চিতভাবে বিজয়ী বলার মত যথেষ্ট ভোট এখনও গোণা শেষ হয়নি।

মহামারীর মধ্যে এবারের নির্বাচনে ডাকযোগে যে রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে, তা গুণে শেষ করতে কয়েক দিনও লেগে যেতে পারে।

আর প্রার্থীদের কেউ যদি ফল চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান, তাহলে চূড়ান্ত ফল পেতে লেগে যেতে পারে কয়েক সপ্তাহ।

কোনো ধারণা কী পাওয়া যাচ্ছে?

মঙ্গলবার সারা দিন ভোটাররা যে ভোট দিলেন, তাকে বলে পপুলার ভোট। তবে ওই পপুলার ভোট দিয়ে সরাসরি ফলাফল নির্ধারিত হয় না।

ওই ভোট দিয়ে প্রতিটি রাজ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটর নির্বাচিত হন। আর যিনি পুরো দেশে অর্ধেকের বেশি ইলেকটরের সমর্থন পাবেন, তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকানরা একে বলে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতি।

৫০টি রাজ্য আর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি (ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া) মিলে ইলেকটোরাল কলেজ হল মোট ৫১টি। এসব কলেজে মোট ইলেকটর হবেন ৫৩৮ জন। তার মানে প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করতে হবে।
এ নিয়মে আরও কিছু জটিলতা আছে। একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পান, তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোটও পেয়ে যান। এ নিয়মকে বলে ‘উইনারস টেইক অল’। নেব্রাস্কা আর মেইন বাদে বাকি সব রাজ্যেই এ নিয়ম। নেব্রাস্কা ও মেইনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ইলেকটোরাল ভাগ করে দেওয়া হয়।

এবারের নির্বাচনে ১২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোক ভোট দিয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত ফল বরাবরের মতই নির্ভর করছে কয়েকটি নির্দিষ্ট রাজ্যের ফলের ওপর, যেখানে ইলেকটোরাল ভোট বেশি। আমেরিকানরা এসব রাজ্যকে বলে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’।

তো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত যা দাঁড়িয়েছে, তাতে তিনটি বিষয় বলা যায়।

১. ট্রাম্প ও বাইডেন যেসব রাজ্যে জয় পাবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল, তারা সেখানে কোনো ওলটপালট ছাড়াই জিতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।

২. কয়েকটি ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্যে দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে, সেখানে দুজনের ব্যবধান সামান্য।

৩. এসব রাজ্যের মধ্যে কয়েকটিতে আবার পোস্টাল ভোট গোণা শুরুই হয়নি, সেসব ভোটের হিসাব যোগ হলে সব হিসাবই উল্টে যেতে পারে।

তাহলে ফলাফল বোঝা যাবে কীভাবে?

‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্য ওহাইও আর ফ্লোরিডার ভোটারদের রায় ট্রাম্পের পক্ষে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। সবার নজর এখন কয়েকটি রাজ্যে, যেখানে এখনও গণনা চলছে।

সেসব রাজ্যের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দুই প্রার্থীর জন্যই কয়েক রকম ফল আসতে পারে।

পেনসিলভেইনিয়া, উইসকনসিন ও মিশিগান:
সবার মনোযোগ এখন এই তিন রাজ্যের দিকে। উইসকনসিনের বেশিরভাগ ভোট গণনা হয়ে গেছে, তাতে বাইডেন খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে। মিশিগানে খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে ট্রাম্প। তবে ডেট্রোয়েটের মত ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত কিছু এলাকার সব ভোট এখনও গোণা শেষ হয়নি। আর ২০ ইলেকটোরাল ভোটের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পেনসিলভেইনিয়া ট্রাম্প এগিয়ে আছেন বেশ খানিকটা। তবে সেখানে বিপুল সংখ্যক পোস্টাল ব্যালট এখনও গণনার অপেক্ষায়। সব গুণতে শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

অ্যারিজোনা:
ডেমোক্র্যাটরা ১৯৯৬ সালের পর কখনও এ রাজ্যে জয়ী হতে পারেনি। তবে এবার সেখানে জো বাইডেন এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন।

নেভাডা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা:
এসব রাজ্যের কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে, কোথাও আবার ভোট গণনা অনেক পিছিয়ে আছে।

এক কথায় কী দাঁড়াল?

যা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে ভালো করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। আর যেসব ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্যের ভোট আগে আগে গণনা হয়েছে, সেখানে জো বাইডেন যথেষ্ট ভালো করতে পারেননি। অর্থাৎ, অনিশ্চয়তা নিয়েই সবাইকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

প্রার্থীরা কী বলছেন?

জো বাইডেন তার সমর্থকদের বলেছেন, “আমরা জয়ের পথেই আছি।” কিন্তু সেই সঙ্গে ধৈর্য্য ধরতেও বলেছেন।

অন্যদিকে ভোট গণনা শেষ না হলেও ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা আসলে জিতেই গেছি।” তিনি আবার কারচুপির অভিযোগও এনেছেন, যদিও তার কোনো প্রমাণ নেই।

এখন কী হবে?

ভোট গড়াতে পারে আদালতে: ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, পরিস্থিতি তেমন হলে তিনি আদালতে যাবেন। ভোটের রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও তিনি গণনা থামানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা বলেছেন। অন্যদিকে বাইডেনের প্রচার শিবির বলেছে, তাদের আইনজীবীরাও আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতা কি হতে পারে: পরিস্থিতি যে অনিশ্চিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভোটের রাতে কয়েকটি শহরে বিক্ষোভও হয়েছে। তবে এই অনিশ্চয়তা এখনই বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় গড়াবে বলে আমেরিকানরা মনে করছেন না।

সূত্র: বিবিসি