যেভাবে মাপা হয় ভূমিকম্পের তীব্রতা
ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণের জন্য বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত স্কেলের নাম রিখটার স্কেল। সিসমোগ্রাফ থেকে পাওয়া তথ্য এবং রেখাচিত্র বিশ্লেষণ করে গাণিতিকভাবে ভূমিকম্পকে মাপা হয় রিখটার স্কেলের মাধ্যমে। রিখটার স্কেলে ০ থেকে ১০ মাত্রা পর্যন্ত মাপা যায় ভূমিকম্পের তীব্রতাকে।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়েছে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও প্রতিবেশী সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা। সেখানে বেড়েই চলেছে লাশের সারি।
স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশে শক্তিশালী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিগত একশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চার হাজার ৩৭২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই মারা গেছে দুই হাজার ৯২১ জন। আর আহত হয়েছে ১৫ হাজার ৮৩৪ জন। তুরস্কের দুর্যোগ সেবা বিভাগের প্রধান ইউনুস সেজের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, একই ঘটনায় প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪১ জনে। দেশটিতে আহত হয়েছে তিন হাজার ৫৩১ জন।
শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর এখন পর্যন্ত ১০০টি আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে। এসব আফটারশকের মাত্রা ছিল ৪ বা তার বেশি ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) এর তথ্যানুসারে, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে ৪.০ বা তার বেশি মাত্রার অন্তত ১০০টি আফটারশক হয়েছে।
মূল ভূমিকম্পের সময় যত বাড়ে, আফটারশকের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতাও কমতে থাকে। তবে ৫ থেকে ৬ প্লাস মাত্রার আফটারশক এখনও ঘটতে পারে এবং মূল ভূমিকম্পের সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। আফটারশকগুলো উদ্ধারকারী দল এবং ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়া জীবিতদের জন্য একটি ক্রমাগত হুমকির কারণ হয়ে থাকে।
কীভাবে মাপা হয় ভূমিকম্পের তীব্রতা?
ভূমিকম্প হলেই তীব্রতা বোঝার জন্য সবাই ভূমিকম্পের মাত্রা সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু এই মাত্রা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
মূলত ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পন বা কম্পনের ঢেউ রেকর্ড করা হয় সিসমোমিটার দিয়ে। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পনের মাত্রা দিয়ে যে রেখাচিত্র তৈরি করা হয়, তাকে বলা হয় সিসমোগ্রাফ।
ভূমিকম্পের সময় যে সিসমিক ঢেউ তৈরি হয়, সেগুলো বিশ্বজুড়েই কম বা বেশি মাত্রায় প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর যে কোনও স্থানে মাটির নিচের কম্পন সৃষ্টি হলে তা সিসমোগ্রাফে মাপা হয়। সিসমোগ্রাফ স্টেশনে রেকর্ড হওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, সময়কাল ও স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করা হয়।
ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণের জন্য বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত স্কেলের নাম রিখটার স্কেল। সিসমোগ্রাফ থেকে পাওয়া তথ্য এবং রেখাচিত্র বিশ্লেষণ করে গাণিতিকভাবে ভূমিকম্পকে মাপা হয় রিখটার স্কেলের মাধ্যমে। রিখটার স্কেলে ০ থেকে ১০ মাত্রা পর্যন্ত মাপা যায় ভূমিকম্পের তীব্রতাকে।
সিসমোমিটারে রেকর্ড হওয়া ভূকম্পনের বিস্তার, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে সিসমোমিটারের দূরত্ব বিবেচনা করে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়। সেই সঙ্গে যোগ করা হয় ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব। এসব মিলিয়ে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়।
ভূমিকম্পের বিভিন্ন মাত্রা সম্পর্কে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিখটার স্কেলের ১ এবং ২ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় সময়ই হতে পারে এবং এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘটে কিন্তু মানুষ টের পায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর মতো জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই ১ থেকে ২ মাত্রার ভূকম্পন হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা এতটাই হালকা যে তা অনুভূত হয় না, তবে সিসমোমিটারে তা ধরা পড়ে।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ৭ কিংবা ৮ হয় তবে সেটা প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয়। এই মাত্রার ভূমিকম্পগুলো তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়।
রিখটার স্কেলের উদ্ভাবক কে?
রিখটার স্কেলের উদ্ভাবক চার্লস এফ রিখটার। ১৯৩৫ সালে মার্কিন এই ভূকম্পবিদ এবং পদার্থবিদ ভূমিকম্প পরিমাপের স্কেল তৈরি করেন। তার নামেই এর নাম রাখা হয় রিখটার স্কেল। রিখটার তখন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে কর্মরত ছিলেন।
রিখটার স্কেল ছাড়াও ভূমিকম্প মাপার জন্য অন্যান্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে রিখটার স্কেলই ভূমিকম্পের পরিমাপক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, ইউএসজিএস
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন