ভ্যালেন্টাইন ও ভাষা দিবসকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে সাভারের ফুল চাষীরা

সাভারের বিরুলিয়া গোলাপ গ্রাম থেকে ঘুরে আওয়ার নিউজ বিড ডট কমের একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরী করেছেন টিপু সুলতান (রবিন)।

রাজধানী ঢাকার পার্শবর্তী শিল্পাঞ্চলখ্যাত সাভারে তুরাগ নদীর তীরে বিরুলিয়া ইউনিয়নে গোলাপ গ্রামের অবস্থান।

চারদিকে দিগন্তজোড়া গোলাপের লাল টকটকে দৃশ্যে নজর আটকে যাবে যে কারোই। গ্রাম গুলো যেন গোলাপের ভূ-স্বর্গ।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা প্রতিবেদককে জানায়,১৯৯০ সাল থেকে এই অঞ্চলে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের চাষ শুরু হয়।

গোলাপের ফলন ভালো ও লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু হয়। আর অল্প সময়ের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিরুলিয়ার গ্রাম গুলোতে। তখন থেকেই সাভারের বিরুলিয়া গোলাপ গ্রাম নামে পরিচিতি পেতে শুরু করে।

আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন আর ভাষা দিবস ঘিরে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামের ১২শ ফুল চাষীপরিবার।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর থাকে গোলাপ গ্রাম।

গোলাপের নিখাদ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ছুটে আসছেন এখানে।

তাইতো দিনভর পরিবারের প্রিয় সদস্যদের সাথে নিয়ে বাগান থেকে নিজ হাতে ‍ফুল তুলে ফ্রেমবন্দী করতে ভুলছেন না দর্শনার্থীরা।একই সাথে কম দামে বাগানের তাজা গোলাপ কিনতে পেরেও খুশি তারা।

ঢাকার বাড্ডা থেকে পরিবার নিয়ে বিরুলিয়ার গোলাপ বাগান দেখতে এসে আজিজুর রহমান আওয়ার নিউজ বিডিকে, জানান বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও ইউটিউবে গোলাপ গ্রামের কথা জানতে পেরে ছুটির দিনটিতে গোলাপ গ্রামের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এসেছেন ,কিনেছেন বাগান থেকে টাটকা গোলাপ ,পরিবারের সকলেই এখানে এসে খুবই আনন্দিত। সময় পেলে আবার ও আসবেন গোলাপ গ্রামে।

আরেক দর্শনার্থী জুয়েল শহরিয়ার নারায়নগঞ্জ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসছেনে গোলাপ বাগানে তিনি আওয়ার নিউজকে জানান,গোলাপ বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য পাকিং সুবিধা ও সরাসরি ফুল বাগান থেকে ফুল কেনা ও ছবি তোলার ব্যবস্থা গোলাপ গ্রামকে রুপান্তর করেছে একটি পর্যটন এলাকাহিসেবে। গোলাপ গ্রাম নিজ চোখে দেখতে পেরে খুশি নবদম্পতি।

তবে আরেক দর্শনার্থী নাম না প্রকাশের শর্তে আওয়ার নিউজ প্রতিবেদক কে, অভিযোগ করে বলেন অনেক বাগান মালিকরা বাগানে প্রবেশ ও ছবি তোলার জন্য অধিক টাকা দাবী করে থাকেন সাথে সময় নির্ধারণ করে দেন। সময় সীমা পার হলে সাধারণ দর্শনার্থীদের থেকে দ্বিগুন টাকা দাবীকরে থাকনে যা পরিবার পরিজন সহ ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের বিব্রিতকর পরিস্থিতিতে ফেলেদেয়।তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এই গ্রামে প্রচুর দর্শনার্থীরা আসলেও তাদের নিরাপত্তায় নেই স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা আওয়ার নিউজ বিডি ডটকমকে বলেন, গোলাপ গ্রামের পাশেই ভবানীপুর এলাকায় পুলিশের ক্যাম্প রয়েছে,সার্বক্ষণিক গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
যোদিও বা সরেজমিনেও দেখা মেলেনি আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর সদস্যদের।

করোনা মহামারি আর বাগানে মড়কের সংক্রমণের পর এবছর বিরুলিয়ার গোলাপ বাগান গুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে।

ফলন ভালো হওয়ায় ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও ভাষা দিবস ঘিরে বাড়তি লাভের আশায় বাগান পরিচর্যায় দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল চাষীরা।

ফুল চাষী মনিরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানায়,গতকয়েক বছরের তুলনায় এবার ফুলের ফলন ভালো হওয়াতে আর বাজারে ফুলের চাহিদা থাকায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন তারা। ৫টাকা থেকে দাম শুরু হয় কিন্তু বিশেষ দিনগুলোতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ফুল বিক্রি করে থাকেন।

আরেক ফুলচাষী শাহ আলম আওয়ার নিউজকে বলেন এবার তার তিন বিঘা জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে তিনি প্রতিদিন ১৫শ গোলাপ সংগ্রহ করেন যার বাজার মূল্য দশ হাজার টাকা তবে সামনের বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ৩লক্ষ টাকার ‍ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদি তিনি।

সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, মৈস্তাপাড়া, কমলাপুরসহ ২৯ টি গ্রামে ব্যাপক হারে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে।যার মধ্যে অধিকাংশ জমিতেই চাষ হয় নানা প্রজাতির গোলাপ।

সাদুল্লাহপুর ,শ্যামপুর ও মোস্তাপাড়ায় রয়েছে ফুল বেচাঁকেনার জন্য পাইকারী বাজার।

ফুল চাষিরা বাগান থেকে ফুল তুলে বিকেলের মধ্যেই বাজারে নিয়ে যান। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত চলে ফুল বেচাকেনা।এই বাজার গুলো থেকেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে ঢাকা সহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকনে।

গতবছর বিজয় দিবস ও ইংরেজি নতুন বছরে ফুলের ভাল বেচাকেনা হওয়ায় আসছে দিবস গুলোতে ভালো দামের আশায় ফুলচাষীরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ আওয়ার নিউজ বিডি ডটকমকে জানান, এবছর চলতি মৌসুমে প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত ৩ বছরের মধ্য এবার রেকর্ড পরিমান ফুল বিক্রি করেছেন চাষীরা ।

বাজারে ফুলের চাহিদা ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে চাষিরা লাভের পাশা,পাশি করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে ।

বছরে কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়ে থাকে সাভার উপজেলার বিরুলিয়া গোলাপ গ্রাম গুলো থেকে। গোলাপ চাষের উপর নির্ভর এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। সরকারী ভাবে প্রশিক্ষন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাড়বে নতুন,নতুন উদ্যোগতা।দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী করে বৈদেশি মূদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠ সকলে।