রংপুরে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা অগ্রণী ই-কমার্স লিঃ

রংপুরের তারাগঞ্জে পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের সঞ্চিত প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে অগ্রণী ই-কমার্স লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। টাকা ফেরতের আশায় কার্যালয়ের সামনে ভীর করলেও প্রতিকার মিলছে না। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা।

স্থানীয় লোকজন ও এনজিও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় মাস আগে উপজেলা পরিষদের পাশে ব্র্যাক মোড় এলাকায় জনৈক নির্মল শাহ নামে এক ব্যক্তির বাসা ভাড়া নিয়ে অগ্রণী ই-কমার্স লিমিটেডের কার্যালয় চালু করে।জাতীয় পরিচপত্রে ফটোকপি, রঙিন চার কপি ছবি আর সঞ্চয় জমা করলে এক সপ্তাহে মিলবে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। অন্যান্য এনজিওর তুলনায় সুদের হার কম। এমন প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে মাসিক সম্মানির কথা বলে দলনেতা করে সমিতি গঠন করা দেয়া হয়। সেখানে ম্যানেজার গিয়ে সদস্য ফরম ও ঋণ ফরম বিতরণ করেন। এনজিওতে পাঁচ হাজার জমা রাখলে ৫০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা জমা রাখলে এক লাখ। এভাবে হাজারে ১০০ টাকা হারে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণের জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় আদায় শুরু করেন তারা।

১৪ আগস্ট থেকে ঋণ বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন ঋণ নিতে গিয়ে গ্রাহকরা দেখেন কার্যালয়ে তালা। মুঠোফোনে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া না পাওয়ায় তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই দিনই শত শত মানুষ কার্যালটির সামনে ভীড় জমান। এখনও প্রতিদিন প্রতারিত গ্রাহকরা সঞ্চয় ফেরতের আশায় এনজিওটির বন্ধ কার্যালয়ে ভীড় করছেন।

প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, অগ্রণী ই-কমার্স লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ওমর ফারুকের বাড়ি দিনাজপুরে। তাদের এলাকায় অন্য একটি এনজিওতে তিনি দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ওমর ফারুকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং পরিশোধ করেছেন। জুলাইয়ের শুরুর দিকে ওমর ফারুক তাদের বাজারে এসে জানান তিনি এখন অগ্রণী ই-কমার্স এনজিওর ম্যানেজার। সেখানে সহজ শর্তে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এজন্য গ্রাহকদের হাজারে ১০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখতে হবে। তাই তারা ঋণের জন্য সঞ্চয় রাখেন। কিন্তু ঋণ বিতরণের দিন কার্যালয়ে গেলে তালা ঝুলতে দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পরে জানতে পারেন এটি ভুয়া এবং তারা প্রতারণা শিকার।

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জিয়া রহমান জানান, তার নির্বাচনী ওয়ার্ডসহ বালাবাড়ি, লক্ষীপুর, মাটিয়ালপাড়া, ফকিরপাড়া, হাজীপাড়া, দোহাজারী, বরাতিসহ ইকরচালী ইউনিয়নের গ্রামের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও কৃষকের টাকা সঞ্চিত প্রায় ৫০ লাখ লোপাট করে পালিয়েছে ওই এনজিও। বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে ওই এনজিওর কারও সঙ্গে ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ করতে পারেননি।

ইকরচালী বাজারের শফিকুল, একরামুল, ডাঙ্গাপাড়ার খলিল রহমান, জয়নাল আবেদীন, মেনানগর গ্রামে ভুট্টু মিয়া, মনোয়ারা বেগম, জুম্মাপাড়া গ্রামের সাইদুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার আশায় অনেক কষ্ট করে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় জমা করেছি। এখন লোনতো দূরের কথা সঞ্চয়টুকুও হারালাম।

জানতে চাইলে বাসার মালিক নির্মল শাহ বলেন, অগ্রণী ই-কমার্স লিমিটেডের লোকজন আমার বাসা ভাড়া নেয়। একমাসেও কাগজপত্র না দেওয়ায় বিষয়টি থানায় জানাই। পুলিশ যোগাযোগ করলে কাগজপত্র আনার কথা বলে চলে যায়। এখন সঞ্চয় ফেরতের জন্য প্রতিদিন লোকজন আসছে, গালমন্দ করছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অগ্রণী ই-কমার্স লিমিটেডের ম্যানেজার ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়।

তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান খোলা কাগজকে বলেন, প্রতারণার শিকার কয়েকজন থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।