রংপুরের পীরগঞ্জে ভূমি জালিয়াত চক্র সক্রিয়, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
রংপুরের পীরগঞ্জে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা, বাড়ছে জনসংখ্যাও। কিন্তু বাড়ছে না শুধু জমির পরিমাণ। ফলে জমির অতিরিক্ত চাহিদার কারণে গত এক যুগে জমির মূল্যও বেড়েছে বহুগুণ। জমির মূল্য বাড়ার সাথে সাথে ভূমি জালিয়াত চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ সব ভূমি সন্ত্রাসীরা যেখানেই জমি নিয়ে বিরোধ, সেখানেই তাদের সরব উপস্থিতি। পেশিশক্তি ও স্থানীয় ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তার যোকসাজসে মসজিদ, মাদ্রাসার সম্পত্তিসহ নিরীহ মানুষের ক্রয়কৃত, ব্যক্তিগত ও পৈত্রিক সম্পত্তিও দখল করে নিচ্ছে এ চক্রটি। জমির সিএস ও এসএ মূলে জমির মালিকানা থাকলেও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কিংবা জাল দলিল দেখিয়ে একের এক জমি দখল করে গিলছে ভূমিদস্যু চক্রটি। শুধু তাই নয়, বিরোধপূর্ণ জমির যেকোন একটি পক্ষ নিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আদালতে মামলার পর মামলা দিয়ে হেনেস্তা করছে। মামলায় পড়ে অসহায় মানুষগুলো একদিকে যেমন আদালত পাড়ায় বছরের পর বছর পায়ের জুতা ক্ষয় করছে, অন্যদিকে জমির প্রকৃত মালিক হওয়া সত্বেও নিজ ঘরেই যেন পরবাস জীবন যাপন করছে। ভূমিদস্যু ঐ চক্রটি অনেক সময় কোন পক্ষ হতে মোটা অংকের বিনিময়ে বিরোধপূর্ণ জমি থেকে সটকে পড়ে। বিরোধপূর্ণ জমি দখলের ক্ষেত্রে ভাড়াটে হিসেবেও এই বাহিনীর সুনাম রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি জালিয়াত চক্রের মুল হোতা উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের দানিসনগর গ্রামের রমজান আলীর পুত্র গোলাপ মিয়া (৫৭)। জমি দখল আর জালিয়াতিই নয়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অন্যের জমির ধান পুড়িয়ে দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে চোরাই গরু ছাপানোর অভিযোগও অহরহ। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্তে ডজন খানেক মামলাও রয়েছে। গোলাপ মিয়ার ভূমি জালিয়াত চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, রাংগামাটি গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের পুত্র সোনা মিয়া (৪৫), একই গ্রামের আব্দুল ছাত্তারের পুত্র রফিকুল ইসলাম (৪৭), মোফাজ্জল মিয়ার পুত্র সুরুজ মিয়া (৪৫), ভাবনচূড়া গ্রামের আকাব্বর আলীর পুত্র তছলিম উদ্দিন (৪৮), পালগড় গ্রামের হানিফ মিয়া (৫০) প্রমূখ।
ভূক্তভোগীরা জানায়, গোপালপুর জামে মসজিদের ৩০ শতাংশ জমি, পীরেরহাট আলিম মাদ্রাসার ৯ শতাংশ জমি (ভেন্ডাবাড়ী- পীরের হাট সড়ক সংলগ্ন), রাঙ্গামাটি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ৪৫ শতাংশ জমি, দানিসনগর আদিবাসী পল্লীর তুফানু পাহানের ২একর জমি, একই গ্রামের মংলা পাহানের ১ একর জমি, জলাইডাঙ্গা গ্রামের শওকত মাষ্টারের ৩০ শতাংশ জমি ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এবং জাল দলিল দেখিয়ে বলপূর্বক দখল করেছে ঐ চক্রটি। পীরেরহাট এলাকার বিধবা ভিক্ষারীনি রাবেয়া বেগম (৫৫)কে একাধিকবার শারিরীকভাবে নির্যাতন করে জাল দলিল বানিয়ে ১০ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা চালায়। বর্তমান উক্ত জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভূমিদস্যুরা দখল করতে পারেনি। এছাড়া আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পান্থাপুকুর গ্রামের মৃত বয়েজ উদ্দিনের পুত্র ফজলুল হকের পৈত্রিক ১৩ শতাংশ জমিতে লাঠিয়াল বাহিনী সেজে দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেছে। এসব ব্যাপারে আদালতে পৃথক পৃথক মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসী তদন্ত সাপেক্ষে ভূমি জালিয়াত চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন