রাজকুমারীকেও যৌন হয়রানি!

নোবেল কমিটির ঘনিষ্ঠ, ফরাসি চিত্রগ্রাহক জঁ-ক্লদ আর্নোর বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল গত বছর শেষের দিকে। চাপে পড়ে পদত্যাগ করেছিলেন অ্যাকাডেমির একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

যাদের মধ্যে ছিলেন আর্নোর স্ত্রী ক্যাটরিনা ফ্রস্টেনসনও। এর মধ্যে প্রকাশ্যে চলে এসেছে আরেকটি বিস্ফোরক তথ্য।

একটি সুইডিশ দৈনিকের দাবি, ২০০৬ সালে অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে আর্নো সুইডেনের রাজকুমারী ভিক্টোরিয়াকেও হেনস্তা করেছিলেন। আর্নো অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।-খবর আনন্দবাজারপত্রিকা অনলাইনের।

যদিও একাধিক সাক্ষী রয়েছে সেদিনের ঘটনার। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা তিনজন জানিয়েছেন, ২৭ বছর বয়সী রাজকুমারীর গায়ে আপত্তিকরভাবে হাত দিয়েছিলেন আর্নো।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সুইডিশ লেখিকা এবা উইট-ব্রাটস্টর্ম বলেন, হঠাৎই আর্নো এগিয়ে যান ভিক্টোরিয়ার দিকে। দেখলাম, তিনি সোজা গিয়ে ভিক্টোরিয়ার ঘাড়ে হাত রাখলেন। আর তার পর অশালীনভাবে রাজকুমারীকে স্পর্শ করতে লাগলেন।

ভিক্টোরিয়ার মহিলা সহকারী ব্যাপারটি লক্ষ করে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন। উনি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েন ভিক্টোরিয়াকে বাঁচাতে। টেনে সরিয়ে দেন আর্নোকে।

সেদিন ঘটনার বীভৎসতায় চমকে গিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া। উনি সম্ভবত এমন অভিজ্ঞতার শিকার আগে কখনও হননি।

হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের অধ্যাপক এবা জানান, ওই ঘটনার সময়ে প্রিন্সেসের সঙ্গে ছিলেন তিনি, তার সাবেক স্বামী তথা অ্যাকাডেমির সাবেক সচিব হোরাস এংডাল, রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফ ও অন্য দুই অ্যাকাডেমি সদস্য। সবাই দেখেছিলেন বিষয়টি।

পরের বছরের অনুষ্ঠানে সুইডিশ কোর্ট থেকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, আর্নোর সঙ্গে কখনও যেন একা ছাড়া না হয় ভিক্টোরিয়াকে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এর বেশি শোরগোল হয়নি।

গত বছর নভেম্বর মাসে ফের উঠে আসে আর্নোর নাম। এবার তার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনেন ১৮ জন মহিলা। তাদের দাবি, কখনও অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে তো কখনও স্টকহোমস, প্যারিসে নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে, সুযোগ বুঝে তাদের আর্নো হেনস্তা করেছেন।

আর্নোর আইনজীবী বলেন, আমার মক্কেল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার নামে কুৎসা রটাতে ও তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এসব করা হচ্ছে।

সুইডিশ রয়্যাল কোর্টের মিডিয়া সচিব মার্গারেটা থরগ্রেন বলেন, আমরা মি-টু প্রচারকে সমর্থন করি। আর্নোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি ভয়ঙ্কর। কিন্তু এ ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

এ ঘটনার জেরে গত নভেম্বরের পর থেকে অ্যাকাডেমির ছয় সদস্যকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আর্নোর স্ত্রী, কবি ক্যাটরিনা ফ্রস্টেনসনও অ্যাকাডেমির সদস্যা। তার পদত্যাগেরও দাবি ওঠে। ক্যাটরিনা পদত্যাগ না করায় এ বছর এপ্রিলে আরও তিন সদস্য ইস্তফা দেন।

পরের সপ্তাহেই ক্যাটরিনা ও অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব সারা ড্যানিউস পদত্যাগপত্র জমা দেন। গত শুক্রবার ঔপন্যাসিক সারা স্ট্রিডসবার্গ জানিয়েছেন, তিনিও অ্যাকাডেমি ছাড়ছেন।

পরিস্থিতি এমনই যে পড়ে থাকা ১০ সদস্য আগামী বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ বৈঠকে ঠিক করবেন, এ বছর আদৌ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা যাবে, কিনা।

অ্যাকাডেমির এক সদস্য পার ওয়াস্টবার্গ বলেন, খুব সম্ভবত বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে, এ বছর পুরস্কার ঘোষণা করা যাবে কিনা। সে ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের অক্টোবরে একসঙ্গে দুটি সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা করা হবে।