রিকশা চালাতে কষ্ট হলেও রোজা ভাঙেন না ৭৭ বছরের হানিফ

রিকশার প্যাডেলেই ঘোরে তার সংসার ও তার জীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা ঢাকার ব্যস্ত শহরে হাড়-ভাঙা পরিশ্রমের পর উপার্জিত অর্থে চাল-ডাল কিনে বাসায় ফিরে স্ত্রীর হাতে তুলে দেন বাকি অর্থ। সেই ঢাকার ব্যস্ততম মোড় শাহবাগ।

‘ওই বুড়া মিয়া, রিকশাডা একটু পিছে নেন। মোটরসাইকেল নিয়া ডাইন দিক দিয়া বাইর অইয়া যাই।’ জবাবে বৃদ্ধা রিকশাচালকটি বললেন, ‘বাবারে, সামনে পিছনে এক ইঞ্চি জায়গাও নাই। কেমনে পিছামু। আমারও তো নামাজ পড়ার সময় হইয়া আইছে।’

বুধবার বিকাল আনুমানিক পৌনে ৫টায় শাহবাগ থানার সামনে বৃদ্ধ রিকশাচালককে উদ্দেশ করে প্রচণ্ড যানজটে আটকে পড়া ২৪-২৫ বছর বয়সী মোটরসাইকেল আরোহী ও ওই বৃদ্ধা রিকশা চালক।

একটু লক্ষ্য করতেই দেখা গেল মাথায় টুপি, গায়ে বোতাম খোলা শার্ট, লুঙ্গির ওপর গামছা বাঁধা শুশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধের শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। পেটের চামড়া কুঁচকে কয়েকটা ভাঁজ পড়েছে। বৃদ্ধ এ রিকশাচালকের বেশিরভাগ দাঁত পড়ে যাওয়ায় কথাগুলোও জড়িয়ে আসছিল। যানজট কমলে রিকশাচালক উল্টো দিকে ঘুরে শাহবাগ থানার সামনে দাঁড়ান।

কৌতূহলবশত কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধ রিকশাচালকের নাম হানিফ। বয়স ৭৬ পেরিয়ে ৭৭ বছরে পড়েছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হানিফ গত ২৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান।

পরিবারে কে কে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার ছিল। বড় ছেলেটা মারা গেছে আর ছোট ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

রিকশার ঘানি টানতে তো অনেক কষ্ট, তাই রোজা রাখছেন কিনা জিজ্ঞাসা করতেই বৃদ্ধ কিছুটা উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘এইডা কী জিগাইলেন? যত কষ্টই হউক রোজা ভাঙিনি, ভাঙমুও না। রোজা না রাইখ্যা খালি পেট ভইরা খাইলে কবরে গিয়া কী জবাব দিমু।’

তবে ওই বৃদ্ধাও স্বপ্নে দেখেন। তার স্বপ্ন নিয়ে হানিফ বলেন, ‘বুড়া বয়সে রিকশার প্যাডেল টানতে খুব কষ্ট হয়। তাই স্বপ্ন দেখি মৃত্যুর আগে একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেনার। এজন্য ৭৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। পরিবার ও নিজের খরচ মিটিয়ে গত কয়েক বছরে ২৫ হাজার টাকা জমিয়েছি। জানি না কত দিনে বাকি টাকা জমবো।’