ল্যাব লিক থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিলো কোভিড ভাইরাস, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের : দা গার্ডিয়ান
কোভিড-১৯ ভাইরাস যা বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নিয়েছিলো তা সম্ভবত ল্যাবরেটরি থেকে লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো। তবে এটি কোনো অস্ত্র কর্মসূচির অংশ ছিল না।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, হোয়াইট হাউস এবং সিনিয়র আমেরিকান আইন প্রণেতাদের দেওয়া ২০২১ সালের ইউএস এনার্জি ডিপার্টমেন্ট স্টাডি থেকে এই খবর সামনে এসেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে যে কীভাবে ভাইরাসটি আবির্ভূত হয়েছিল সে সম্পর্কে গবেষণা চালাতে গিয়ে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক এভ্রিল হেইন্সের অফিসের একটি নথির আপডেটে সামনে এসেছে। এফবিআই মনে করছে, ভাইরাসটি একটি চীনা পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছিলো। ইউএস এনার্জি ডিপার্টমেন্ট ১৭টি ইউএস ল্যাবরেটরির নেটওয়ার্কের তত্ত্বাবধান করে। যদিও রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্ত প্রয়োজন তা সত্ত্বেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি নিয়ে পরস্পরবিরোধী অনুমানগুলি সামনে আসতে থাকে। কখনো বলা হয় একটি অজ্ঞাত প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কখনোবা উহানের একটি চীনা গবেষণাগার থেকে লিক করে।
কোভিড-১৯-এর বিস্তার ২০২০ সালের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির চোখে অজান্তেই ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭ মিলিয়নেরও বেশি মৃত্যুর কারণ হয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দিয়ে এটিকে “চীন ভাইরাস” বলে অভিহিত করেছেন। যদিও জো বাইডেন বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিকরণ এড়াতে চেয়েছেন। মার্কিন এনার্জি বিভাগের হালফিল ফলাফলগুলি অন্য চারটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের বিপরীতে চলে। যারা বলেছিলো প্রাণী থেকে প্রাকৃতিক সংক্রমণের ফলে মহামারীটি শুরু হয়েছিল। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জার্নালকে বলেছেন, বিভিন্ন কারণে ইউএস এনার্জি ডিপার্টমেন্ট এবং এফবিআই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের সমীক্ষা অনুসারে প্রাকৃতিক সংক্রমণ তত্ত্বের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
২০২১ সালে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলেও কোভিড -১৯ একটি চীনা জৈবিক অস্ত্র কর্মসূচির অংশ নয় ছিলো না বলে জানিয়েছে মার্কিন এনার্জি বিভাগ। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, জেক সুলিভান, রবিবার স্বীকার করেছেন যে এই বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে ভিন্ন মতামত রয়েছে। সুলিভান সিএনএনকে বলেন, “গোয়েন্দা বিভাগের কিছু উপাদান এক সিদ্ধান্তে পৌঁছলেও তাদের কাছে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট তথ্য নেই।” সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন বাইডেন প্রশাসন বিষয়টির গভীরে যাবার জন্য গোয়েন্দা বিভাগকে এই সম্পর্কিত প্রতিটি উপাদান তদন্ত করে দেখতে বলেছেন। সুলিভান যোগ করেছেন, বাইডেন বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন যে এনার্জি বিভাগের অধীনে জাতীয় পরীক্ষাগারগুলিকে মূল্যায়নে আনা হোক, কি ঘটেছে তা বের করার জন্য তিনি প্রতিটি উপাদান পরীক্ষা করার কথাও বলেছেন তিনি। ১৮ টির মধ্যে আটটি গোয়েন্দা সংস্থা কোভিড -১৯ এর উত্সের দিকে নজর দিয়েছে।
২০২০ সালের মে মাসে শক্তি বিভাগের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে উপসংহারে পৌঁছেছিল যে ল্যাব-লিক তত্ত্বটি প্রশংসনীয় ছিল। জ্বালানি বিভাগের একজন মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে লিখেছেন যে সংস্থাটি “রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুসারে কোভিড-১৯ এর উত্স অনুসন্ধানে আমাদের গোয়েন্দা পেশাদারদের পুঙ্খানুপুঙ্খ, সতর্ক এবং উদ্দেশ্যমূলক কাজকে সমর্থন করে চলেছে”। চীনা কর্মকর্তারা মানতে রাজি নন যে কোভিড -১৯ তাদের ল্যাব থেকে লিক হতে পারে, এর মধ্যে রয়েছে উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি, চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং উহান ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট।
২০২১ সালে প্রাথমিক গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে, কোভিড -১৯ প্রথম চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়েছিলো। উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির তিনজন গবেষক যারা করোনভাইরাস সম্পর্কিত গবেষণায় জড়িত ছিলেন বলে মনে করা হয় তাঁরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন।
সূত্র : দা গার্ডিয়ান
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন