শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ফি নির্ধারণ করে দেবে সরকার
দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের শিক্ষা ব্যয় নির্ধারণ করে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালা আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন হতে পারে।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এই নীতিমালা সম্পর্কে মাউশি মহাপরিচালক বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ নানানভাবে লুটপাটের অভিযোগ আসছিল। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই। ফলে এই নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খসড়া নীতিমালাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী বছর থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হতে পারে। এটি বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নীতিমালায় যেসব খাতে শিক্ষা ব্যয় যা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে সেগুলো হল-
স্কুলে মাসিক বেতন ও ভর্তি ফি
ঢাকা মহানগর ও তার আশেপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির মাসিক বেতন ২৫-৪৫ টাকা, জেলা সদর ও পৌর এলাকায় ২০-৪০ টাকা, উপজেলায় ১৫-৩৫ টাকা এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ১২-৩০ টাকা নির্ধারিত থাকবে। ভর্তির আবেদন ফি পর্যায়ক্রমে ৭৫-২০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। ভর্তি ও পূর্ণ ভর্তি ফি ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা ধার্য থাকবে।
ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফি
প্রাথমিক স্তরে ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফি নেওয়া যাবে ৩০০- ৫০০ টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৬০০-৮০০ টাকা। এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠান ফি ৫০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ১০০, মুদ্রণ বাবদ ১৫০, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, বিতর্ক ও বিভিন্ন দিবস উদযাপনে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, কম্পিউটার চার্জ ২৫ থেকে ৫০ টাকা, কৃষি ও বাগান ফি (যদি থাকে) ৩০ টাকা, কমন রুম ফি ২০ থেকে ৩৫, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫, বিএনসিসি ফি ৫, রেডক্রিসেন্ট ফি ২০, মসজিদ ও উপাসনালয়ের জন্য ২৫ থেকে ৫০ টাকা ধার্য করা থাকবে।
রেজিস্ট্রেশন ফি
অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি, পরীক্ষার ফি, ব্যবহারিক পত্রের ফি, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি, মূল সনদ ফি শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এছাড়া স্কাউট ফি, ক্রীড়া, কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফিও নির্ধারণ করে দেবে বোর্ড। উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী আদায় করা যাবে।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ব্যয়
কলেজ পর্যায়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হবে ৮০-১৫০ টাকা, অনলাইন আবেদন, রেজিস্ট্রেশন ফি, উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। প্রতি বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ফি ৫০ থেকে ৪০ টাকা আদায় করা হবে।
তবে প্রতি বিষয়ে, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদ, পরীক্ষা কেন্দ্র, রোভারস্কাউট, ক্রীড়া, রেডক্রিসেন্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি, বিএনসিসি ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে।
কলেজে আনুষঙ্গিক ব্যয়
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হবে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এর বাইরে কল্যাণ ফি বাবদ ২০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৩০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২৫ টাকা, ল্যাবরেটরি/বিজ্ঞানাগার ফি ১০০ টাকা, আইসিটি ফি ২০ টাকা, ম্যাগাজিন খাতে ৩০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যয় ৩০ টাকা, সাংস্কৃতিক, বির্তক ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২০’ নামের একটি খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করতে এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন