এ দৃশ্য সেলুনের!

চুল কাটার অপেক্ষায় চুপচাপ বসে না থেকে ম্যাগাজিন অথবা কোনো গল্পের বইয়ের পাতা উল্টিয়েও কিছুক্ষণ বসে থাকা যায়।

যতক্ষণ না নিজের ডাক আসে, এমন একটি দৃশ্য চোখে পড়বে নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা দূর্গাপুরের পৌর এলাকার বিরিশিরি সড়কের পাশে কৃষ্ণ শীল নামে এক যুবকের ছোট একটি সেলুনে।

আঁটসাঁট ছোট ওই সেলুনে ঠিকমতো দু-চারজন বসার জায়গা না হলেও পড়ার প্রতি ভালোবাসা দেখে মনে হবে এক চিলতে পাঠাগার।

কৃষ্ণের বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখে করোনাকালীন সময়ে জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্রের সহায়তায় এই বই রাখা। এক এক করে বর্তমানে এখন প্রায় ২০০-এর মতো বইসহ নানা ম্যাগাজিন রয়েছে তার সেলুন পাঠাগারে।

লাইব্রেরির মতো দেখতে সেলুনে অনেকে যেমন চুল কাটতে এসে বই দেখে বা পড়ে যেতে পারেন। আবার অনেকে বই পড়তে বা দেখে যেতে এসেও চুল কেটে যান।

সেলুনে আগতরা জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ বিভিন্ন বইয়ে চোখ বুলালে আমাদের জ্ঞান সঞ্চয়ে যেমন অনেক সহায়তা হয়, তেমনি চুল কাটতে এসেও সিরিয়াল ধরার সময়টাও অনায়াসেই কেটে যায়। টেরই পাওয়া যায় না। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি একটি ভালো উদ্যোগ।

এদিকে কৃষ্ণ চন্দ্র শীল জানান, ছোটবেলায় ইচ্ছা থাকার পরও দারিদ্র্যতার কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। প্রাইমারির গণ্ডি কোনো রকমে পেরোলেও উচ্চ মাধ্যমিক আর পার হতে পারেননি তিনি। এখন সেলুন দিয়ে সংসার চালান। এটির ওপর সংসার নির্ভর করে। সেলুনে একজনের চুল কাটতে গেলে অনেকের বসে থাকতে হয়। যে কারণে অনেকে ফোন করেও সময়ক্ষেপণ করেন। অথবা ঘুরে আসতে গিয়ে আর আসেন না। তখন মাথায় এল ভালো কিছু একটা করা যেতে পারে। মানুষের যেভাবে সময়ও কাটবে আবার উপকারেও আসবে। আমারও প্রশংসাও হবে।

ঠিক ওই সময়ে জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাতা দীপক সরকার আমার দোকানে একটি সেলফে বই রাখার প্রস্তাব দেন। আমিও উনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। এরপর গত মার্চ থেকে শুরু করি বই রাখা।

এ ব্যাপারে জলসিঁড়ির প্রতিষ্ঠাতা দীপক সরকার বলেন, ২০১২ সালে স্থাপিত জলসিঁড়ি পাঠাগারের কর্মযজ্ঞের সঙ্গে কৃষ্ণ শীল জড়িত ছিলেন। তারপর তিনি একদিন বললেন, সেলুনে রাখা একটিমাত্র পত্রিকা নিয়ে অপেক্ষমাণ অনেকেই টানাটানি করেন। জলসিঁড়ি পাঠাগারের একটি শাখা সেলুনে যদি করা যায়, তাহলে চুল কাটতে এসে অপেক্ষমাণ মানুষ পত্রিকার পাশাপাশি বই পড়ে সময়টা কাটাতে পারে।

বিষয়টাকে আমি গুরুত্ব দিয়ে চুল কাটাতে আসা অপেক্ষমাণ মানুষের সময়টাকে উত্তম ব্যবহার তথা পাঠাভ্যাসের লক্ষ্যে গত মার্চ মাসে কৃষ্ণ শীলের সেলুনে জলসিঁড়ি পাঠাগারের দ্বিতীয় শাখাটি চালু করি।