ষোড়শ সংশোধনী: রায়ের ড্রাফট লিখেছেন একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক করে দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে সরকারিপন্থ আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে। এই রায়ের পর্যবেক্ষণ থেকে ‘আপত্তিকর’ ও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বক্তব্য বাদ দেয়ার দাবিতে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এই সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
রবিবার দুপুরের পর এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য সংসদ সদস্য ফজলে নুর তাপস। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এই ড্রাফট (রায়) কোথা থেকে এসেছে। একটি ইংলিশ পত্রিকার সম্পাদক এই ড্রাফট করে দিয়েছেন। আমরা সেটার নিন্দা জানাই।’
গত ৩ জুলাই বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে আনা সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। এই সংশোধনী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিতি পায়। গত ১ আগস্ট প্রকাশ হওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে শাসন ব্যবস্থা, সংসদ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ইতিহাস নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। এসব মন্তব্য ক্ষুব্ধ করে তুলেছে সরকারি দলকে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও এই রায়কে অপরিপক্ক ও অপ্রাসঙ্গিক বলেছে। তিনি বলেন, বিচার্য বিষয়ের বাইরে গিয়ে রায়ে অযাচিত মন্তব্য করা হয়েছে। যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো বলা উচিত হয়নি।
আর এই অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য বাদ দেয়ার দাবিতে শনিবার তিন দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। তারা রবি, বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের সব আইনজীবী সমিতিকে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
ঘোষিত কর্মসূচির প্রথম দিন সুপ্রিম কোর্টের সমাবেশে পরিষদের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, ‘মামলা চলেছে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, সেই ইস্যু বাদ দিয়ে কিছু অপশক্তি এবং আমরা জানি কারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত। একে একে আমরা তাদের মুখোশ উন্মোচিত করব জাতির সামনে।’
‘আমাদের কথা একদম পরিস্কার। এ রকম অপ্রাসঙ্গিক, অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক যেউ বক্তব্য লেখা হয়েছে ছয়জন বিচারপতি সেটার সঙ্গে একমত পোষণ না করে বিরত থেকেছেন। আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এবং তার সঙ্গে সঙ্গে এই অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যগুলো অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।’
তাপস জানান, আজকে সারা দেশব্যাপী সকল বারে এই প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজিত হয়েছে। আইনজীবীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এই কর্মসূচিতে রয়েছে।
সরকারপন্থী আইনজীবী নেতা বলেন, ‘যখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংবিধান এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে আইনজীবী সমাজ সব সময় জেগে উঠেছে এবং রুখে দাঁড়িয়েছে। আজকে সেই ষড়যন্ত্র দানা বেধেছে। তাই আজকে আইনজীবী সমাজ ক্ষুব্ধ এবং তাই এই প্রতিবাদ আয়োজন করেছে।’
সমাবেশে বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘এই রায়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে কটাক্ষ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে তাতে আমি মনে করি, এই রায় আর থাকার কোন সুযোগ নাই।’
‘আমি অনুরোধ জানাই অনতিবিলম্বে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রায় বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন রায় লেখার। সেই রায় হবে সংশোধনীর রায়।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘যে রায় দেয়া হয়েছে, যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, একক ব্যক্তির নেতৃত্বে তা হয়নি। এটা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘এ রায়ের পর বিএনপি মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন মিছিল বের করছেন এটা কীসের লক্ষণ? এটাতো পাকিস্তান না। যে সুপ্রিমকোর্ট রায় দেবে আর সেনাবাহিনী এসে দখল করে আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এই দিবাস্বপ্ন দেখবেন না।’
আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘সংসদ সার্বভৌম। সংসদকে হেয় করে আপনি (প্রধান বিচারপতি) কী বোঝাতে চেয়েছেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’
বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থার সমালোচনা করে রেজাউল করিম বলেন, ‘মার্শাল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আইনকে একদিকে বৈধ বলবেন আর গণতান্ত্রিক সংসদের প্রতিষ্ঠিত আইনকে বলবেন অবৈধ এ বিষয়গুলো জাতি বুঝতে পারছে না। আমাদের পরিস্কার কথা এই বাংলাদেশের চোরাগলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার পথ আর কারো জন্য নাই।’
আওয়ামী লীগরে আইন সম্পাদক বলেন, ‘জন কেরি, বান কি মুনের টেলিফোনকে পাত্তা দেন নাই শেখ হাসিনা। আর বাংলাদেশের খুচরা খাচরা কেউ যদি কোন স্বপ্ন দেখে থাকেন যে শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলে পানি ঘোলা করে নতুন কিছু অর্জন করার চেষ্টা করবেন তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন