সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি
(৪ আগস্ট) রোববার সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ছাত্রী আম জনতার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিহতের ৬ পরিবার।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নিজ নিজ পরিবার থেকে বিজ্ঞ আইনজীবিদের মাধ্যমে অভিযোক্তদের বিরুদ্ধে এজহার লেখা শেষ হয়েছে। ওই দিনের ঘটনায় উস্কানিদাতা সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদিকা লাকি আক্তার ওরফে লাকি আহমেদ প্রধান আসামী করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় আসামী করা হচ্ছে সিলেট মেন্দিভাগ গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আলিম রানা ও গোলাপগঞ্জে শীর্ষ আরও কয়েক জন ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতাদের নাম উঠেছে। ওই মামলা গুলো আদালতে না থানায় করবেন এটি নিশ্চিত করতে রাজী নয় নিহতের পরিবার, তবে আগামী সপ্তাহে যে কোন এক দিন হবে বলে নিশ্চিত করেন অনেকে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহতরা হলেন, উপজেলার বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০), ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের গৌছ উদ্দিন (৩৫), শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদেও ছেলে সানি আহমদ (২২), দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ (২০), দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩) ও একই উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম।
বৈষম্য বিরোধী শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে হঠাৎ ছাত্রলীগ হামলা করে রণক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়ে উঠে ছিলো ঢাকা দক্ষিণ এলাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জানায় লাকি আক্তার ওরফে লাকি আহমেদ সিলেটের চিত্র নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে বার-বার ছাত্রলীগ মাটে নেই বলে উস্কানি দিতে থাকেন, কখনও সিলেটে শহরের পরিস্থিতি কথাও বলতে থাকেন ছাত্রলীগদের নিয়ে, এর কিছুক্ষণ পর সিলেট মেন্দিভাগ গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আলিম রানা স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এবং গুলি চুড়তে থাকে প্রকাশ্যে ছাত্রদের উপর।
ছাত্রলীগ নেতাদের আধিপত্য বিস্তার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ও বিজিবি তাদের সাথে যোগ দেয়। ওই সময় ঘটনাস্থলে নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম নিহত হন।
সুত্রে জানা যায়, লাকি আহমেদ সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদিকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সব সময় বিরোধীতা করতেন। শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর ক্ষমতা যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দখলে চলে আসে, তখনই সেই লাকি আহমেদ ও ছাত্রলীগ নেতা রানা নিজের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিক হিসেবে নিজে জাহির করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের পক্ষে কথা বলতে থাকেন এবং নিজেরদের ফেসবুক পেইজ থেকে গুণগান গাইতে থাকেন।
সরকার পতনের পালের হাওয়ার পরিবর্তনে দেখে ঘটনার দিন রাতেই ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভটি ডিলেট কওে দেন। তাহলে এখন নিহত পরিবারের প্রশ্ন ওই ৬টি প্রাণ কাদের গুলিতে আহত হয়েছেন এ প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে সচেতন মহলের নিকট। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার সংবাদ চার দিকে চাউর হলে স্থানীয়রা পুলিশও বিজিবিকে ধাওয়া করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
এদিকে ওই দিন সকাল থেকে সমগ্র গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ছাত্র আন্দোলনে বিজিবির গাড়ি ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পুলিশ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ বাজার, বারকোট এলাকায় হাসপাতাল সংলগ্ন ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরে রবার বুলেট ও গুলি ছুড়লে প্রায় ২ শতাধীক শিক্ষার্থী, পথচারী, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আহত হয়েছেন।
পুলিশের সাথে সরাসরি ছাত্রলীগ নেতা রানা গ্রুপের নেতাকর্মীরা ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা গুলি ছুঁড়তে দেখেন বলে স্থানীয়রা জানান। ওই সময় গুলিবৃদ্ধ আহতদের উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সকলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এদিকে তাজ উদ্দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ায় এলাকাবাসী তার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল কওে গোলাপগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন।
এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা হাসপাতালের সম্মুখে স্থানীয় জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে উপজেলার সিলেট- গোলাপগঞ্জ-ঢাকা দক্ষিণ সড়ক অবরোধ করে পুলিশ ও বিজিবিকে ধাওয়া করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন সহ নাজমুল এ দুই জন নিহত হন। আহত হন অনেকেই। এতে করে সমগ্র উপজেলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো সে সময়। শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় সাধারণ মানুষ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন