সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল শুরু
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাথে পর্যটন নগরী মেঘের রাজ্য হিসেবে খ্যাত সাজেক ধসেপড়া পাহাড়ের মাটি অপসারণে পর সড়কে অবশেষে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ২০ইসিবি সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পাহাড় ধসে আটকা পড়া পর্যটকবাহী গাড়ি টানা প্রায় ৮ঘণ্টা বন্ধের পর স্বাভাবিক হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কে যোগাযোগ সচল হওয়ার বাংলাদেশ সোনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে বিচ্ছিন্ন হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্রটিতে বেড়াতে যাওয়া প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আটকা পড়েন। যান চলাচল শুরু হলে পর্যটকদের আসা-যাওয়া শুরু হয়। সেনাবাহিনীর ইসিবি’র সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি অপসারণের কাজ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর সহায়তায় দীর্ঘ ৮ঘণ্টা পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আকতার। পাহাড় ধসের ঘটনায় রাস্তার দুই পাশে আটকা পড়ে কয়েক হাজার পর্যটক। মঙ্গলবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। মাটি সরাতে সকাল থেকে সেনাবাহিনী কাজ করেছে।
খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর জাহিদ হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বুধবার(৫ই অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ঠা অক্টোবর) বিকেল থেকে ভারী বর্ষণের কারণে রাতে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের নন্দরাম এলাকায় পাহাড় ধসে পড়লে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনার বিবরনে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষ সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি জেলার বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের নন্দারাম এলাকায় বিশাল পাহাড় ধসে পড়েছে। ফলে খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির সাজেক পর্যটক কেন্দ্রের যাওয়ার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার(৪ঠা অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রবল বৃষ্টিবর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নন্দারাম নামক স্থানে পাহাড় ধসে সাজেকের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয় যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে নন্দরাম এলাকা।
পাহাড় ধসের কারণে দুপাশে বহু গাড়ি আটকা পড়ে। তাতে দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকরা। অবশ্য পর্যটকদের নিরাপত্তার কারণে অধিকাংশ গাড়িগুলোই সাজেক থেকে ফেরার পথে মাচালং বাজারে এবং সাজেকগামী গাড়িগুলোকে বাঘাইহাটে আটকে রাখা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনীর একটি টিম রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করে। সাজেক এলাকায় প্রায় ২হাজার ও প্রবেশের জন্য আরও প্রায় ৩ হাজার পর্যটক আটকে আছে। সব মিলে প্রায় ৫হাজার পর্যটক থাকতে পারেন।
এর আগে, মঙ্গলবার(৪ঠা অক্টোবর) রাতে প্রচুর ভারি বৃষ্টির কারণে হঠাৎ পাহাড় ধসে খাগড়াছড়ির সাজেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে সাজেক-খাগড়াছড়ি রাস্তার শুকনানন্দ রামপাড়া এলাকায় রাস্তার উপর পাহাড়ের বেশ বড় অংশ ধসে পড়ে। খবর পেয়ে বুধবার সকাল ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাটি অপসারণের কাজ শুরু করেন।
তবে ওই জায়গার আশপাশে কোন বসতি না থাকায় ঠিক কখন এই ঘটনা তা জানা যায়নি। এর ফলে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক মেরামত করেছে ২০ইসিবি।
আরো জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও সরকারি বন্ধের কারণে মেঘের রাজ্য হিসেবে খ্যাত রাঙামাটি সাজেক ভ্যালিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামে। সাজেকের প্রায় ১১২টি কটেজ সবগুলোই বুকিং।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ন দেব বর্মন জানান, ‘সকালে বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের সাজেক এলাকায় প্রায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০০গাড়ি রয়েছে। যা মঙ্গলবার(৪ঠা অক্টোবর) এসেছিল। বুধবার(৫ঠা অক্টোবর) সকালে অনেকের চলে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এখন সবাই আটকা পড়েছেন। আমাদের এখানে ১১২টি কটেজ আছে। সব মিলে প্রায় চার হাজার পর্যটক অবস্থান করে। বুধবার(৫ই অক্টোবর) সকালে খাগড়াছড়ি থেকে আরো শতাধিক গাড়ি সাজেকের পথে রওনা দেয়। বিকেলেও আরো শতাধিক পর্যটকের গাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উভয় দিক থেকে পর্যটকদের গাড়িগুলো আটকা পড়ে। এতে করে হাজারো পর্যটক দুর্ভোগের শিকার হয়।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যান মিত্র বড়–ুয়া জানান, সকালে পাহাড় ধসের ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। সাজেক এলাকায় প্রায় ছোট বড় মিলে ২০০গাড়ি রয়েছে। যা ৪ঠা অক্টোবর(মঙ্গলবার) এসেছিল। বুধবার(৫ই অক্টোবর) সকালে অনেকের চলে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু পাহাড় ধসের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই আটকে পড়ে। দুপুরের দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হলে গাড়ি ছাড়তে শুরু করে।
খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর মো: জাহিদ হাসান জানান, সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ইসিবির সদস্যরা ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরাতে কাজ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ২০ইসিবির সদস্যরা ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরানোর কাজ শুরু করে। দুপুর ২টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
খাগড়াছাড় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দিবাগত রাতে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্রটিতে বেড়াতে যাওয়া প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আটকা পড়েছেন। সাজেক সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি দল।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহমেদ(অপরাধ) বলেন, রাতের বৃষ্টিপাতের কারণে সাজেক সড়কের পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এতে সড়ক যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। আশা করছি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার(ইউএনও) জানান, ‘মঙ্গলবার রাতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সাজেকে পাহাড় ধসের খবর সকাল ৮টার দিকে শুনেছি। পাহাড় ধসের পর সেনাবাহিনীর ২০ইসিবি’র সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়রা মাটি সরানোর কাজে নেমে পড়েন। দুপুর আড়াইটার দিকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এখন কোনো সমস্যা নেই। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে, পর্যটকরাও যাতায়াত শুরু করেছেন।
ইউএনও আরও বলেন, সড়ক থেকে মাটি সড়াতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। কয়েক ঘন্টার মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। গতকাল রাতে বাঘাইছড়িতে বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। যে কারণে সাজেকে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সাজেকে পাহাড় ধসের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক দুই পাশে আটকে পড়ে।
উল্লেখ্য, পূজার ছুটির কারণে হাজারও পর্যটক ভিড় করেছিল সাজেকে। টানা নয় দিনের ছুটির কারণে সাজেকে বাড়তি পর্যটকের চাপ রয়েছে। বর্তমানে সেখানে দুই হাজার পর্যটক অবস্থান করছেন। আরও তিন হাজার পর্যটক প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান।
মেঘের রাজ্য হিসেবে পরিচিত রাঙামাটি সাজেক ভ্যালি। বন্ধের দিনগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে। সনাতম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও সরকারি দুই বন্ধের কারণে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় আশা করেছিলেন কটেজ মালিকরা। তবে পাহাড়ধসের ঘটনায় দুপাড়ে কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। এর ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা তাদের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন