দিল্লি এখন ধর্ষণের রাজধানী : গৌতম গম্ভীর

গৌতম গম্ভীর : গত সপ্তাহে মুম্বাইয়ে ছিলাম আইপিএলের ম্যাচ খেলতে। বহুবার মুম্বাইয়ে গেছি, কিন্তু একবারও শহরটাকে ঘুরে দেখিনি। খেলার চাপই বলুন বা আলস্য, আমার কাছে মুম্বাই ব্যাপারটা ছিল হোটেল–মাঠ–হোটেল। -আজকাল

মাঠের ফলাফল ভালোহলে মাঝেসাঝে স্থানীয় এক আইসক্রিমের দোকান অথবা মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে গেছি, আবার হোটেলে ফেরত চলে এসেছি। কিন্তু এবার আমার মুম্বই যাত্রা একটু অন্যরকম হল।

দিল্লিতে আমার এক সাংবাদিক–‌বন্ধু আছে যে বিদেশের একটা স্পোর্টস চ্যানেলে ফ্রিলান্সিং করে। ওরা মুম্বাইয়ের ক্রিকেট সংস্কৃতি একটা তথ্যচিত্র করছে। যদিও আমার বন্ধু একজন ‘‌পাক্কা দিল্লিওয়ালা’‌।

আপনারা নিশ্চয়ই দিল্লির এমন মানুষ দেখে থাকবেন যারা মঙ্গলবার এলেই বাটার চিকেন আর শাহি পনিরে ডুবে যায়, যারা ‘‌প্লিজ’‌ এবং ‘‌থ্যাঙ্ক ইউ’‌–এর মাঝেও অভিশাপ দিতে পারে, সেরকমই ক্রিকেটপ্রেমীরা আবার মুম্বাইকে ঘৃণা করে, যারা ৪১ বার রনজি ট্রফিজিতেছে।

অবাক করা ব্যাপার হল, মাত্র পাঁচদিন তথ্যচিত্রের শুটিং করেই ওরা মুম্বাই ক্রিকেটের ফ্যান হয়ে গেছে। এখন আর অন্য দিকে ওর মন ঘোরানো যাবে না। মনে রাখবেন, ও হল এমন বন্ধু যে জেনারেটরের আওয়াজের সঙ্গে নেচে দিতে পারে।

এখন সে যদি আমাকে মুম্বাইয়ের ক্রিকেট ময়দান সম্পর্কে জ্ঞান দিতে থাকে, তাহলে তো অবাক হতেই হয়। যা–‌ই‌ হোক, এই ময়দানগুলোতে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে ও আমাকে মোটামুটি রাজি করিয়ে নিয়েছিল। আমরা মেরিন ড্রাইভের কাছে একটা হোটেলে ছিলাম।

আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল ১০ মিনিট দূরে, ক্রস ময়দানে। মাথায় টুপি, চোখে সানগ্লাস এবং মুখে রুমাল বেঁধে আমি একটা হালকা ছদ্মবেশ নিয়ে নিয়েছিলাম। তখন আট–নয়টা ম্যাচ চলছিল ময়দানে।

একজন প্লেয়ার, যে নিজের দলের থার্ডম্যান পজিশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাকেই মনে হচ্ছিল অন্য এক দলের সিলি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে, আবার আরেক দলের লংঅফে। তাঁবুগুলো ব্যবহার করা হচ্ছিল ড্রেসিংরুম হিসেবে। এত চিৎকারের মধ্যেও খেলা নিজের ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছিল।

হয়তো ওখান থেকেই নিজেদের আরেকটা শচীনবা রোহিত শর্মা তৈরি করার চেষ্টায়। এরপরে আজাদ ময়দানে গিয়ে এক গ্লাস আখের রস আর পাও–ভাজি খেলাম।

এর মধ্যে মেট্রোর কাজের জন্য এলাকাটা একটু দৃষ্টিকটূ লাগছিল। আরেকটা বাজে ব্যাপার হল, সব জায়গায় শুধু ছেলেদের বা পুরুষদেরই ক্রিকেট অনুশীলন করতে দেখলাম। এমন নয় যে আমার রাজ্য দিল্লিতে ব্যাপারটা আলাদা।

কিন্তু মুম্বইতে আরেকটু বেশি আশা করেছিলাম। চারিদিকে তাকিয়ে অবশ্য বুঝতে পারলাম, যদি মেয়েরা এখানে খেলেও, ওদের জন্য কোনও বাথরুম বা চেঞ্জিং রুম নেই। দুই মেয়ের বাবা হিসেবে আমি বুঝতে পারি কেন মুম্বইবাসীরা নিজেদের মেয়েকে এখানে পাঠাতে চায় না।

দিল্লি এখন পাকাপাকিভাবে দেশের ধর্ষণের রাজধানী হয়ে গেছে। তাই মুম্বাইয়ের মতো দিল্লিতেও মেয়েদের খেলতে না পাঠানোর পিছনে আরও বড় কারণ রয়েছে।

ওখানে দাঁড়িয়ে আমাদের এই অসহায় অবস্থার কথাই ভাবছিলাম। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম যেখানে আমাদের আইপিএল ম্যাচের জন্য তৈরি, সেখানে মুম্বাই ক্রিকেটে আঁতুড়ঘর এই ময়দানগুলোতে কোনও বাথরুম নেই। অথচ এই ময়দানগুলোই মুম্বাই ক্রিকেটের নিঃশ্বাস–প্রশ্বাস।

যা–‌ই হোক, মুম্বাই ভালোহওয়া সত্ত্বেও এবার ওই আইসক্রিমের দোকানটায় যাওয়া হল না। বেঙ্গালুরুতে অবশ্য সেটা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। সব ঠিকঠাক গেলে, চিকু ফ্লেভারের আইসক্রিম আমি খাবই।‌‌