‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা হবে’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী আইন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ অথবা এক্সপানশনের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব আইন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কাজিরপাগলা এ টি ইনস্টিটিউশনে শিক্ষার্থীদর মাঝে বই বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মাহবুবে আলম।

বই বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ ফকির ও লৌহজং উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

পরে ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। একই বছর ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

চলতি বছরের গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

ওই রায় প্রকাশ পাওয়ার পর সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় সদস্যরা এর প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে আরো বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।

আদালত রায়ে আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সাংসদরা ভোট দিতে পারেন না। তাঁরা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সাংসদদের সব সময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাঁরা দলের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

রায়ে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।