হত্যার ২২ বছর পর পুনরায় বিচার শুরু

হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২২ বছর পর নগর জাপা সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার বিচার কাজ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পূণরায় শুরু হচ্ছে।

জন নিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেছেন।

হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১১ ও ২০১৪ সালে মামলাটির বিচার কার্য স্থগিত হয়। ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা থানার কাছে বেসিক ব্যাংকের সামনে দিবালোকে আবুল কাশেম ও তার গাড়ি চালক মিকাইল হোসেন খুন হন।

আদালতের সূত্র জানায়, নিহতের নিকট আত্মীয় বানিয়াখামার এলাকার মৃত শেখ আব্দুল খালেকের ছেলে শেখ আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বাদী ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। তদন্তের পর ১৯৯৬ সালের ৫ মে ১০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

১০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হচ্ছেন নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত জলিল টাওয়ারের মালিক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম, সাউথ সেন্ট্রাল রোড এলাকার অধিবাসী তরিকুল হুদা টফি, প্রাক্তন সংসদ সদস্য (খুলনা-৩, চতুর্থ জাতীয় সংসদ) আব্দুল গফফার বিশ্বাস, কেসিসির প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু, আনিসুর রহমান ওরফে মিল্টন, মো. তারেক, জাপা মনোনীত কেসিসির আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এসএম মুশফিকুর রহমান, তার সহোদর ওয়াসিকুর রহমান ও মফিজুর রহমান।

গত ২০ বছরে নিহতের ভাইপো শেখ মনিরুজ্জামান এলু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. শাহজাহান, কেষ্ট দাস, শেখ মঞ্জুর মোর্শেদসহ ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ মনিরুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০১১ সালের ৮ জুন এবং অপর আসামি আব্দুল গফফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন। সর্বশেষ আর কোনো আদেশ না থাকায় আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর মো. মোস্তফা কামাল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা ও মো. আব্দুল হান্নানকে ধার্য দিনে (২৮ সেপ্টেম্বর) হাজির হওয়ার জন্য স্থানীয় আদালত ২৩ আগস্ট সমন জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত ধার্য দিনটি সম্পর্কে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের অবহিত করেন।

এ আদালতের বিশেষ পিপি আরিফ মাহমুদ লিটন জানান, সর্বশেষ উচ্চ আদালতের কোনো আদেশ না থাকায় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল মামলার বিচার কাজ পুনরায় শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন।’

নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ৮ জুন মামলার বিচার কাজ শুরু হলেও তা ২২ বছরেও শেষ হয়নি। বিচার কাজ শুরুর প্রথম দিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিআরপিসি ৪৯৪ ধারা মতে প্রজ্ঞাপনে চার্জশিট থেকে আওয়ামী লীগ নেতা প্রাক্তন মেয়র কাজী আমিনুল হকের নাম বাদ দেয়। প্রধান সাক্ষী আসাদুজ্জামান লিটু ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সুপার (এসপি) খোন্দকার ইকবালও ইন্তেকাল করেছেন।

উল্লেখ্য, নিহত শেখ আবুল কাশেম জাতীয় পার্টির আমলে নতুন বাংলা যুব জনসংহতির খুলনা নগর শাখার আহ্বায়ক, নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও অধুনালুপ্ত খুলনা পৌরসভার ইকবাল নগরের কমিশনার ছিলেন। মৃত্যুকালে খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। তার সহোদর শেখ আবুল খয়ের ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে খুন হন। তখন এই পরিবার মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।