পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মসজিদের পুকুর পুনঃখনন না করে বাড়ির পুকুর খনন করলেন চেয়ারম্যান

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ভেচকি প্যাদা বাড়ি জামে মসজিদের পুকুরটি পুনঃখনন না করে সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে বাড়ির সামনে নতুন পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের অবহেলায় এ অনিয়ম হয়েছে বলে জানা গেছে।

নিজের জমিতে পুকুর খনন সম্ভব না হওয়ায় প্রতিপক্ষদের জমি দখল করারও অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দারের বিরুদ্ধে। রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার মঠবাড়িয়া উপজেলার ৬ নং টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ৫ নং ওয়ার্ড ভেচকি গ্রামের মৃত পান্না জমাদ্দারের পুত্র।

জানা গেছে, ভেচকি প্যাদা বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন নতুন পুকুর বরাদ্দ পাওয়ার আবেদন করেন মসজিদের সভাপতি রিপন চেয়ারম্যান। ১০/০৮/২১ ইং তারিখে আবেদনটি করেন তিনি। আবেদনে মসজিদ সংলগ্ন কোন পুকুর নেই বলে উল্লেখ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদ সংলগ্ন জেলা পরিষদের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে একটি সরকারি পুকুর রয়েছে। অথচ চেয়ারম্যান সাহেব আবেদনে পুকুর না থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।আর এভাবেই সুচতুর চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের কিছু জমিতে এবং প্রতিপক্ষদের জমি দখল করে মসজিদ সংলগ্ন সরকারি পুকুরের মাত্র ১০০ গজ দুরত্বে আরেকটি সরকারি পুকুর বরাদ্দ করেন।জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে পুকুরটি খননও করান তিনি।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পিরোজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,রিপন চেয়ারম্যান মৎস্য চাষ করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই পুকুরটি বরাদ্দ করেছে। পুকুর খনন প্রকল্পের স্কিমে জমির পরিচয়ের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক দখল করে পুকুরটি খনন করা হয়েছে। ঠিকাদারকে অবগত করার পরেও কোন কর্ণপাত না করে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।অভিযোগ ওঠার পর দখল করা জমি প্রকৃত মালিকদের নিকট থেকে ক্রয় করারও চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্টরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করার পর বাকি কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ থাকলেও পুকুর পাড়ে একটি উদ্বোধনী নেমপ্লেট বসানো হয়েছে।নতুন পুকুর খনন করা হলেও নেমপ্লেটে পুনঃখনন উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্যাকেজ নং VWSP 1766 এর পুকুর খননে জমি সংক্রান্ত জটিলতার জন্য তুষখালী এবং দক্ষিণ সোনাখালীর দুটি পুকুর খনন করা সম্ভব হয়নি।মঠবাড়িয়া উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সহ ঠিকাদার সাইট পরিদর্শন করলে প্রি-ওয়ার্ক করার সময় পুকুর খননে এ জটিলতা দেখা দেয়। এরপর ওই পুকুর দু’টির একটি রিপন চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে আরেকটি মহিউদ্দিন আহমেদ মহিলা ডিগ্রি কলেজে অনুমোদন করানো হয়।এরপর নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই পুকুর দু’টি খনন করা হয়।

প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য পুকুর খননের কথা থাকলেও পৌর শহরের মহিলা কলেজের একটি পুকুর পুনঃখনন দেখানো হয়েছে। দেখলে বোঝার উপায় নেই যে,২০২০-২১ অর্থ বছরে পুকুরটি খনন করা হয়েছে।পুকুরের চারপাশে ফুটপাত করার কথা থাকলেও তা এখনও করা হয়নি।পুকুর পাড় রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়নি বেষ্টনি।অথচ পুকুরপাড়ে দৃশ্যমান রয়েছে একটি উদ্বোধনী নেমপ্লেট।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উপ সহকারি প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারের সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি ছাড়া কাজের সিডিউল, বরাদ্দ, বিলের পরিমান সহ কোন তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।তবে ভেচকির পুকুরটিতে ২২ লক্ষ টাকা এবং মহিলা কলেজের পুকুরটিতে ৮ লক্ষ টাকার মত বিল হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহমেদ স্টীল ইন্ডাস্ট্রিজের তওহীদুল বাসার কবির জানান,মসজিদটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার যেখানে কাজ করতে বলেছে আমরা সেখানে কাজ করেছি।একটু ঝামেলার কারনে কিছু কাজ বাকি আছে।তবে বিল সম্পূর্ণ উত্তোলন করা হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জানান,জনস্বার্থে পুকুরটি খনন করা হয়েছে। কোন অনিয়ম হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম গাজী জানান,এ ধরনের পুকুর খননে জনপ্রতিনিধিরাই সাইট সিলেকশন করে থাকেন। আমরা শুধু কাজ বাস্তবায়ন করি।ভেচকি পুকুর খননে একটি অভিযোগ উঠেছে। এজন্য আংশিক কাজ বাকি আছে। আর মহিলা কলেজের পুকুর খনন অসঙ্গতি থাকলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।