‘মেয়েদের আগেই বিক্রি করেছি, এখন আমার কিডনি’

চরম অর্থনৈতিক সংকটে আফগানিস্তানে বর্তমানে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানের লাখো মানুষ এখন খাদ্য সংকটে ভুগছেন।

চার দশকের যুদ্ধ ও দুঃখ-দুর্দশার পর দেশটি একটি গুরুতর বিপর্যয়ের মুখোমুখি। প্রচণ্ড শীতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। খবর দ্যা গার্ডিয়ানের।

ধারদেনা পরিশোধ করতে ঘরবাড়ি বিক্রি করে মাটির একটি কুঁড়েঘরে হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় নিজ দেশে শরণার্থীর জীবনযাপন করছেন বাদঘির প্রদেশের দেলারাম রহমতি নামে ৫০ বছর বয়সি এক নারী।

দুই ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। তাদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না অর্থের অভাবে। স্বামীও অসুস্থ ও বেকার। এর আগে পেটের দায়ে আট ও ছয় বছর বয়সি দুই মেয়েকে এক লাখ আফগানির (৭০০ মার্কিন ডলার) বিনিময়ে বিক্রি করেন।

এবার তার কিডনি বিক্রি করেছেন পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমঠো খাবার তুলে দিতে। এ ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই।

দেলারাম রহমতির মতোই অবস্থা দেশটির চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা সাড়ে তিন কোটি আফগান নাগরিকের আজ এ দুরাবস্থা।

গত আগস্টে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সে দেশের মানুষ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সে দেশ ছেড়ে আসার পর নিজেদের অভিবাসন নীতি শিথিল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিমানে করে তাদের সমর্থক বেশ কয়েক হাজার ভাগ্যবান আফগান নাগরিকদের উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও আফগানিস্তানের বর্তমান সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের দরজা বন্ধ করে রেখেছে তারা।

সন্ত্রাস দমনের নামে যে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে এড়িয়ে আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল, গত ২০ বছর তাদের সমর্থিত সরকার বসিয়ে সে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতা করে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হওয়ার পর সেই যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই বিভিন্ন দেশের সরকার আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখে।

এ কারণে দেশটিতে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। দেশটির ৯৫ শতাংশ মানুষ দুবেলা খেতে পারছেন না। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।