পাবনার ঈশ্বরদীতে জন্ম ও মৃত্যু সনদ পেতে পদে পদে ভোগান্তি!

পাবনার ঈশ্বরদীতে ঈশ্বরদী পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে কঠিন শর্তের কারণে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যুসনদ নিতে এসে প্রতিদিন ভোগান্তির মুখে পড়ছেন হাজারো মানুষ। কঠিন শর্তের কারণে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিদিন মানুষ জরুরী প্রয়োজনে জন্ম ও মৃত্যুসনদ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তথ্যপুরণ করতে না পারার কারণে অনলাইনের সার্ভার থেকে সনদ ‘ভুল’ বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন মানুষ।

ঈশ্বরদী পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯টি বাধ্যতামূলক শর্তের কারণে যেমন মৃত্যুসনদ নিতে শর্তপুরণ করতে পারছেন না কেউ, তেমনি জন্মসনদ পেতেও ব্যাপক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

পৌরসভা ও ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে সফটওয়্যার আপডেট না করার কারণে এই জটিলতা নিরসন করা যাচ্ছেনা।

জানা গেছে, মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ডসহ যেসব শর্ত নতুনভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তার কোনটিই পুরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সেবা গ্রহীতা অনেকে বলেছেন, যিনি বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন তার জন্মের সময় ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থাই ছিলনা, তাহলে এই মৃত ব্যক্তির মৃত্যুসনদ পেতে তা কিভাবে জমা দেওয়া সম্ভব? শুন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর জন্মসনদ নিতে পিতা-মাতার আইডি কার্ডসহ যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তা সবার ক্ষেত্রে প্রদান করাও অসম্ভব।

আবার ৫ বছরের অধিক বয়সীদের জন্য যেসব শর্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তার বেশিরভাগই প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা। এসব কারণে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জমি রেজিস্ট্রি, স্কুল-কলেজে ভর্তি, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিভিন্ন ভাতার টাকা উত্তোলনসহ সরকারি বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম জন্ম-মৃত্যু সনদ সময়মত না পাওয়ার কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, যখন আমার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম তখন জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিলনা, এখন নতুন নিয়মে তা অনলাইনে বাধ্যতামূলক করার কারণে উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেছে।

সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, নতুন নিয়মে স্কুলে ভর্তির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ জন্ম নিবন্ধন সনদ চাইছেন, এখন সন্তানের সনদ পেতে বাবা-মা এমনকি দাদার জন্ম সনদও করতে হচ্ছে, এভাবে একজন শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য এক পরিবারের ৪-৫ জন সদস্যদের জন্ম সনদ করতে হচ্ছে, এতে চরম ভোগান্তি ও জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ভোগান্তির শিকার এসব মানুষরা জন্ম-মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজের যে তালিকা করা হয়েছে তার মধ্যে কিছু কিছু বাধ্যতামুলক শর্ত শিথিল ও বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

ঈশ্বরদী পৌরসভার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন কঠিন শর্ত পুরণ করতে না পেরে ঈশ্বরদী পৌরসভা থেকে প্রচুর মানুষ ফিরে যাচ্ছেন, ইচ্ছা থাকলেও তাদের সনদ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা।

ঈশ্বরদী পৌরসভার সচিব মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, জন্ম ও মৃত্যু সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্তসমূহ সহজ ও শিথিল করা জরুরী হয়ে পড়েছে। শর্ত শিথিল না করা হলে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সফটওয়্যার আপডেট না করা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হবে।