যশোরের মনিরামপুরের পশ্চিমাঞ্চলে রমরমা অবৈধ ইটভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে দেদারছে চলছে অবৈধ ইটভাটার রমরমা ব্যবসা। সংশ্লিষ্টরা অবাধে কাটছে ফসলি জমির টপ সয়েল। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। মাটি কাটার ফলে জমি হারাচ্ছে তার উর্বর ক্ষমতা। এছাড়া ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতো হচ্ছেই। সবদিক মিলিয়ে হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরে, মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিমা লের শাহাপুর গোল্ড, ষোলখাদার একতা ও মল্লিমপুরের বিশ্বাস ইট ভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ বিপর্যয়ের অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন- এভাবে ভাটার কার্যক্রম চলতে থাকলে আর ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি কাটার ফলে কৃষি কাজে মারাত্মক ক্ষতি হবেই। এটা নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। তারা আরও বলেন- ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি কাটার কোনো নিয়ম নেই। সরেজমিনে দেখা যায়- মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিমা লে বেশ কয়েকটি ইটের ভাটা রয়েছে।
ভাটাগুলোর পাশেই রয়েছে স্কুল ও মাদ্রাসা। কোনো কোনো ভাটার অবস্থান সবজি ও ধান ক্ষেতের মধ্যে। অনেক সময় ভাটার গরম ধোয়ায় সবজি ও ধান ক্ষেত পুড়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ে কৃষকেরা। ষোলখাদার একতা ভাটাসহ কয়েকটি ভাটা রয়েছে জনবসতি এলাকায়। এভাবেই আইন লঙ্ঘন করে মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিমা লে চলছে অবৈধ ইটভাটা।
লোকালয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও, উল্লেখিত এলাকার জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও কৃষি জমিতে গড়ে উঠছে একের এক অবৈধ ইটভাটা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তবে তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ইটভাটার মালিকদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ- প্রশাসনের যোগসাজসে অনুমোদন ছাড়াই ভাটা মালিকরা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব ইটভাটা। শাহাপুর গ্রামের কবির আহম্মদ নামের একজন কৃষক জানান- সবজি ও ধান ক্ষেতের মধ্যে গোল্ড ভাটা থাকায়, তাদের জমিতে ঠিকমতো ফসল হয় না। ইট ভাটার ধোঁয়া ও ধুলার কারণে চলতে ফিরতেও সমস্যা হয়।
ষোলখাদা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন- বাজারে ও ঘনবসতির পাশে ইটভাটা থাকার কারণে এলাকার বাসিন্দারা খুবই কষ্টে আছে। উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে বিশ্বাস ভাটা রয়েছে। এ গ্রামের আসিফ হোসেন নামের স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন- তাদের স্কুলের কাছেই রয়েছে ইটভাটা। আসতে-যেতে ইটভাটার মাটিবাহী গাড়িগুলোর দৌরাত্ম্য এবং স্কুল এলে ধোয়াঁ-ধুলার ভোগান্তি।
সব মিলিয়ে খুবই কষ্টে আছি আমরা। এদিকে এসব ইটভাটার কারণে মরে যাচ্ছে গাছপালা, উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই পরিবেশ বিধ্বংসী এসব ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। সড়কে ভাটায় ব্যবহারের জন্য ট্রলিতে মাটি পরিবহনের কারণে, সড়কের উপর ধুলা-বালি আর একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদা।
এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। অভিযোগ রয়েছে- পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়েই ইট ভাটা মালিকরা তাদের ভাটা অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। জানাগেছে- মনিরামপুর উপজেলার পশ্চিমা লের কোনো ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ইটভাটা।
স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দরা বলেছেন- ভাটাগুলো বন্ধ হলে, কৃষক যেমন তার জমিতে ফলাতে পারবে সোনালী ফসল, তেমনি পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচবে স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি যশোর জেলা প্রশাসক আইন শৃঙ্খলা মিটিংএ মনিরামপুরের সকল ইট ভাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এ নির্দেশ অমান্য করে ভাটা মালিকেরা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটা। ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন