শিকারীরা বেপরোয়া হরিণ শিকার বেড়ে গেছে সুন্দরবনে

হরিণ শিকার বেড়ে গেছে সুন্দরবনে । নিয়মিত হরিণ শিকার করে মাংস ও তার চামড়া বিক্রি করছে। কাঁকড়া শিকারের টোপ বানাতেও কিছু জেলে ব্যবহার করছে হরিণের মাংস। গত ২০ দিনে ১০ হরিণ শিকারিকে আটক করেছেন বনরক্ষীরা। উদ্ধার করা হয়েছে হরিণের মাংস, চামড়া, হরিণ ধরা ফাঁদ, ২০ রাউন্ড গুলি ও ট্রলার।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, রাজাপুর, রসুলপুর, মোড়েলগঞ্জের জিউধরা,পাথরঘাটর চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া এলাকার শিকারীরা জেলের বেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে নিয়ে আসে। চোরা শিকারী গোপনে সুন্দরবনে ঢুকে হরিণ শিকার করে। আর কাঁকড়ার টোপ বানাতে হরিণ শিকার করে রামপাল ও সাতক্ষীরার কিছু জেলে। বনসংলগ্ন এলাকার লোকজনই হরিণ শিকারের সাথে বেশি জড়িত।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন জেলে জানিয়েছেন, হরিণ শিকার অনেক বেড়ে গেছে। গভীর বনে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার ও মাংস বিক্রি করছে শিকারীরা। শিকারীদের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের হুমকি দেওয়া হয়। কাঁকড়া শিকারীরাও ব্যাপকভাবে হরিণ শিকার করে মাংস দিয়ে টোপ তৈরি করছে।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় শিকারীরা নিয়মিত হরিণ শিকার করে আসছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বনরক্ষীদের হাতে দুই-চারটি হরিণ পাচারের ঘটনা ধরা পরলেও শিকারীরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে খুব সহজেই বেরিয়ে আসছে বলেও জানা গেছে।

সুন্দরবনের সুপতি, দুবলা, কটকা,কচিখালী,বাদামতলা, চান্দেশ্বর, টিয়ারচর, কোকিলমুনি, আন্ধারমানিকসহ গভীর বনের সুবিধাজনক স্থানে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে থাকে। মাছের ভেতরে বরফ দিয়ে সুবিধাজনক সময়ে লোকালয়ে হরিণের মাংস পাচার করে ।

বনবিভাগ সূত্র জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ইসহাকের চিলা এলাকা থেকে ২০ কেজি হরিণের মাংসহ একটি ডিঙ্গি নৌকা আটক করা হয়। ১৮ জানুয়ারি দুবলার চরের নারকেলবাড়িয়া থেকে ৫ কেজি হরিণের মাংসসহ দুই জনকে আটক করে । ২২ জানুয়ারি সুন্দরবনের কচিখালীর ডিমের চর থেকে ১৫ কেজি হরিণের মাংস, একটি ট্রলারসহ দুই শিকারীকে আটক করে ।

২৩ জানুয়ারি শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রাম থেকে দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয় । ২৫ জানুয়ারি সুন্দরবনের নীলকমল এলাকা থেকে ২০ কেজি হরিণের মাংস ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ এক শিকারীকে আটক করে। ২৭ জানুয়ারি দুবলার জামতলা ও আলোরকোল থেকে হরিণের মাংস ও ফাঁদসহ পাঁচ হরিণ শিকারীকে আটক করে।১০ ফেব্রুয়ারি সুপতি স্টেশনের সরাভাঙা এলাকায় আটক করা হয় দুই শিকারীকে। উদ্ধার করা হয় হরিণের মাথা ও শিকারের সরঞ্জাম। এ সময় দুই শিকারী হরিণের মাংস নিয়ে পালিয়ে যান।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, হরিণ শিকারীদের ধরতে বনবিভাগের নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছে। নিয়মিত টহলে কারণে শিকারীরা আটক হচ্ছে। তবে আটক এসব শিকারীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে আইন আরও কঠোর করতে সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।