অসময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে জ্বরের রোগীর ভিড় বাড়ছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে।

গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা ও এর বাইরের হাসপাতালে ৫০ জন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৪৪ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ছয়জন ভর্তি হন। চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬৫ জন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই আক্রান্তের সংখ্যা ১২৭ জন। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগী ভর্তি রয়েছেন ৮৯ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীতে ৮২ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে সাতজন ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এসব জানা গেছে।

হঠাৎ করে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি বুধবারে আলাপকালে বলেন, রোগব্যাধির স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি অনুসারে সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে এডিসমশাবাহিত ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা না থাকলেও আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে অক্টোবর ও নভেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। এ কারণে আমরা লক্ষ্য করছি যে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি সারাদেশে বিশেষ করে রাজধানীতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম মূলত সিটি করপোরেশনের। মশক নিধনে তারা চিরুনি অভিযানসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করছে। রাজধানীর হাসপাতালের পরিচালক, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

পরিচালক সিডিসি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাাশাপাশি পারিবারিক পর্যায়ে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। ডেঙ্গু মশার বিভিন্ন উৎপত্তিস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও স্বচ্ছ পানি যেন না জমে সেদিকে নিজ উদ্যোগে খেয়াল রাখতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে তিনি বিকেলের দিকে ফুলস্লিপ জামা পরিধান ও শিশুদের শরীর ঢেকে দেয়ার পরামর্শ দেন।

বর্তমান সময়ে জ্বর হলে ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। ঘরে বসে থাকার কারণে ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৯২ জন।

মাসওয়ারি আক্রান্তের পরিসংখ্যান অনুসারে গত জানুয়ারিতে ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫, মার্চে ২৭, এপ্রিলে ২৫, মে মাসে ১০, জুনে ২০, জুলাইয়ে ২৩, আগস্টে ৬৮, সেপ্টেম্বরে ৪৭, অক্টোবরে ১৬৩ এবং নভেম্বরে ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়।

সুখবর হলো আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল চিকিৎসা গ্রহণ শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৯৮ জন। এ পর্যন্ত পাঁচজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দু’জনের তথ্য বিশ্লেষণ শেষে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা একজনের মৃত্যু ডেঙ্গুজ্বরে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।