আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভাই-বোনের স্বর্ণপদক

প্রথমবার ব্যর্থ, দ্বিতীয়বার স্বর্ণ
ছোটবেলা থেকেই জীববিজ্ঞানে আগ্রহী নাইমুল। তবে বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রতিযোগিতাতেই অংশ নিতেন। গত বছর আইএমডিওতে অংশ নিয়ে পুরস্কার জেতা হয়নি, তবে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার হাত ধরেই এবার এসেছে পুরস্কার।
ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াড হাইস্কুল পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোতে ২০১৫ সালে বসেছিল এই আসর। সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে প্রতিযোগিতাটি পরে অনলাইনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় আইএমডিও ফাউন্ডেশন।
আইএমডিওতে যেতে হলে আগে পেরোতে হয় ইউনাইটেড স্টেট মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াডের ধাপ। সেখানেও ১৬০-এর মধ্যে ১৫০ নম্বর পেয়ে শীর্ষ ৫-এ জায়গা করে নিয়েছিলেন নাইমুল। তিনি মনে করেন, নিয়মিত বইপড়ার অভ্যাসটাই তাঁর কাজে লেগেছে।

১০০-তে ৯১! নম্বরই বলে দেয়, নাইমুল ইসলামের স্বর্ণপদক জেতার কারণ। নাইমুল একা নন, আন্তর্জাতিক ওষুধ ও রোগ অলিম্পিয়াডে (ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াড, সংক্ষেপে আইএমডিও) স্বর্ণপদক পেয়েছে তাঁর ছোট বোন তুরে সাইনা তিথিও।
ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে গত বছর উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন নাইমুল। ফুল-রাইড বৃত্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন এই তরুণ। শিগগিরই রওনা হবেন তিনি। অন্যদিকে এ বছরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মূলগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পেরিয়েছে তুরে সাইনা তিথি।

‘গ্রামের একটা স্কুল থেকে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পারাটাও বড়’
অন্যদিকে আইএমডিওতে তিথি পেয়েছে ৮৯। মুঠোফোনে সে জানাল, ‘ভাইয়াকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখতাম। দেখে আমার ইচ্ছা হতো, আবার ভয়ও লাগত। মনে হতো, আমি কি পারব? গ্রামের একটা স্কুল থেকে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পারাটাও বড় একটা ব্যাপার। ভাইয়াই পরামর্শ, দিকনির্দেশনা দিয়েছে। পুরস্কার পেয়ে এখনো অবাক লাগছে।’
প্রথম ধাপের প্রতিযোগিতা হয়েছিল ২৯ জুলাই। আর আগস্টের মাঝামাঝি এসেছে পুরস্কারের খবর। এরই মধ্যে দুই ভাই-বোনের কাছে সনদ পৌঁছে গেছে। শিগগিরই পদক ও সম্মাননা পাবেন বলে জানালেন নাইমুল। বাংলাদেশ থেকে আইএমডিওতে পুরস্কার পেয়েছেন আরও দুজন। ৮৯ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন সামিয়া আফরোজ। এ ছাড়া রৌপ্য জেতা সানাউল হকের নম্বর ৮৫।
এ বছর প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, জানতে চাই নাইমুলের কাছে। বললেন, ‘ইউনাইটেড স্টেট মেডিসিন অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো জটিল ছিল। আর মূল পর্বের প্রশ্ন ছিল ভিন্ন ধাঁচের। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই পরীক্ষা শেষ করি। পরীক্ষা শেষে অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। যখন দেখলাম, অনেকেই প্রশ্ন ও পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত। তখন মনে একটা সাহস পেলাম। মনে হলো, আমার পরীক্ষা তো ভালোই হয়েছে, ভালো কিছুই হবে।’
আর তুরে সাইনা তিথি বলল, ‘ইউনাইটেড স্টেট মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা ভালো হলেও কয়েকটা প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। মূল পর্বে একটা কেস স্টাডি নিয়ে ভুগতে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পরীক্ষা ভালো হওয়ায় আশাবাদী ছিলাম।’
দুই ভাই-বোনই জানালেন, বাংলাদেশে আইএমডিওর অ্যাসোসিয়েশন থাকলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যেত।